ওদের সাথে আবার অল্প সময়ের জন্য দেখা হলো কয়েক মাস পরে আমার আমেরিকা যাবার কিছু আগে। আমি সেন্ট জেমস্-এর ম্যাপ হাউজে গিয়েছিলাম, বেশ কয়েকটা বই কিনতে, যে গুলো আটলান্টিকের দীর্ঘ যাত্রায় পড়বো বলে ভেবেছিলাম – সে সময় আটলান্টিক পাড়ি দেবার কথা উঠলেই টাইটানিক জাহাজের করুণ পরিণতির কথা মনে পড়ে অদ্ভুত অস্বসি-বোধ মনকে ভারাক্রান- করে তুলতো। বই খুঁজতে গিয়েই ভিক্টর আর অ্যানার সাথে দেখা হয়ে গেল।
টেবিলের উপর একগাদা মানচিত্র ছড়িয়ে কি যেন দেখছে ওরা। ওটা গল্প করার জায়গা নয়, তাছাড়া আমি খুব ব্যস- ছিলাম, ওরাও। তাই কথাবার্তা কেবল কুশল বিনিময়ের সাথে দুই একটা টুকিটাকি বিষয়েই কেন্দ্রীভূত ছিল।
ভিক্টর বললো, ‘বুঝতেই পারছো আমরা গ্রীষ্মের ছুটিতে পাহাড়ে উঠছি, সমস- ব্যবস’া প্রায় শেষ। এখনও তুমি তোমার মত বদলে আমাদের সাথে যোগ দিতে পারো।’
আমি বললাম, ‘একবারেই সম্ভব হবে না। যদি সবকিছু ঠিকমত চলে, তাহলে সেপ্টেম্বরে ফিরবো। আমি দেশে ফিরেই তোমাদের সাথে যোগাযোগ করবো। তা কোথায় যাচ্ছো, তোমরা?’
ভিক্টর বললো, ‘অ্যানার পছন্দ। অনেক দিন ধরেই ও বিষয়টা নিয়ে চিন-াভাবনা করছিল, শেষে এমন একটা জায়গা বেছে নিয়েছে, যা একেবারেই দুর্গম বলে মনে হচ্ছে। এখানে তুমি কিম্বা আমি কখনই পা রাখিনি।’
টেবিলের উপরে রাখা বড় মানচিত্রের একটা জায়গায় ও ওর আঙুল রাখলো, যেখানটা অ্যানা আগেই পেন্সিল দিয়ে চিহ্ন এঁকে রেখেছে। ওখানটার লেখাটা পড়লাম আমি, মন্টে ভেরিটা।
মুখ তুলে তাকাতে দেখি অ্যানা আমার দিকে গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম, ‘আমার জানা মতে এটা একেবারেই অপরিচিত জায়গা। তোমরা কিন’ সতর্ক থাকবে আর ভালমতো খোজঁখবর নিয়ে তবে এগোবে। স’ানীয় অভিজ্ঞ পথ প্রদর্শকের সাহায্য নেবে। হঠাৎ করে এই বিশেষ পাহাড়টার দিকে তোমাদের নজর গেল কি করে?’
অ্যানা হাসলো। ওর হাসিতে কি ছিল কে জানে, ওর কাছে আমার নিজেকে নিকৃষ্ট মনে হলো, নিজেকে দুর্বল আর অপমানিত মনে হলো।
অ্যানা বললো, ‘এটা সত্যশৃঙ্গ। আমাদের সাথে চলো না।’
আমি মাথা নেড়ে অসম্মতি জানিয়ে ওখান থেকে চলে এলাম। কয়েক দিন পর দেশ ছেড়েও চলে গেলাম।
পরবর্তী মাসগুলোতে ওদের কথা মনে পড়লে ইর্ষা বোধ হতো আমার। ওরা পাহাড়ে উঠছে, অথচ আমার অতি পছন্দের পাহাড়ে ওঠার সখ দূ’রে সরিয়ে রেখে জটিল, রুক্ষ কাজে জড়িয়ে রয়েছি। একসময় আমার মনে হলো এই সব ঝামেলা দূ’রে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মেকী সভ্য জগতের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ওদের মতো সত্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ি। কিন’ আমার সামাজিকতা আর নিয়ম শৃংখলা আমাকে বেঁধে রেখেছে, যে সম্মান, প্রতিপত্তি আর সম্পদের মোহে আমাদের এই উন্মাদনা, তাকে এক কথায় স-ব্ধ করে দেই কিভাবে? আমার জীবনটা যে একেবারে ছক বাঁধা হয়ে গিয়েছে। এখন এথেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই।
আমি সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডে ফিরে এলাম। বাড়ীতে জমে থাকা চিঠির পাহাড়ের মধ্যে ভিক্টরের কোন চিঠি না দেখে খুব আশ্চর্য হলাম। ও আমাকে চিঠি লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বলেছিল ওদের অভিজ্ঞতার কথা জানাবে। ওদের বাড়িতে টেলিফোন ছিল না তাই ওদের সাথে যোগাযোগ করে খবর নিতে পারলাম না। অন্যান্য ব্যবসায়িক চিঠির উত্তর দিতে বসে ঠিক করলাম এগুলো শেষ করেই ভিক্টরকে চিঠি লিখবো।
কয়েক দিন পর সন্ধ্যায় ক্লাবে গিয়েছিলাম, দরজা দিয়ে বের হতে গিয়ে আমাদের দু’জনের এক বন্ধুর সাথে ধাক্কা খেলাম। ওর সাথে কুশল বিনিময় হলো, ও আমার ব্যবসায় আর আমেরিকা ভ্রমণের কথা জানতে চাইলো, আমি তার সাথে দাড়িঁয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটা কথা বললাম। চলে যাচ্ছি, তখন ও পিছন থেকে আবার ডাক দিলো।
‘ভিক্টরের কথা শুনেছো নিশ্চয়ই, খুবই দুঃখজনক, তাই না? তুমি কি ওর সাথে দেখা করেছো?’
‘কি বলছো তুমি? ভিক্টরের কি হয়েছে? কোন দুর্ঘটনা?’
আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
ও বললো, ‘জানো না? ও তো এখানকার একটা নার্সিং হোমে আছে। খুবই অসুস’। স্নায়বিক দুর্বলতা। ওর স্ত্রী তো ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছে, তারপর থেকেই এ অবস’া।’
আমি চমকে উঠলাম, ‘কি বলছো তুমি, কি অদ্ভুত সংবাদ দিচ্ছো!’
‘ঠিকই বলছি। ওটাই আসল কারণ। ও একেবারে মৃত্যু পথযাত্রী বলতে পারো। জানোই তো ও স্ত্রীকে কতো ভালবাসতো।’
আমি একেবারে নির্বাক হয়ে গেলাম। হতভম্বের মতো ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম, মাথায় কিছু খেললো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কি বলতে চাচ্ছো অ্যানা অন্য কারো সাথে চলে গিয়েছে?’
‘আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে, আমার তাই মনে হয়। ভিক্টর যেমন পুরষ, ওর কাছে থেকে এ পর্যন- কেউ কোন কথা বের করতে পারেনি। ঐ নার্সিং হোমে কয়েক সপ্তাহ ধরে আছে ও, এখনও সুস’ হয়নি বলেই শুনেছি।’
আমি নার্সিং হোমের ঠিকানা জেনে নিলাম। আর তখনই, এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে একটা ট্যাক্সি নিয়ে ওখানে চলে গেলাম। জিজ্ঞেস করতে অভ্যর্থনা কাউন্টার থেকে আমাকে বলা হলো ভিক্টর কারো সাথে দেখা করছে না।
আমি আমার কার্ড বের করে পিছনে কয়েকটা কথা লিখে দিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, ও আমার সাথে দেখা করতে রাজি হবে।
একজন নার্স এসে দোতলার একটা ঘরে আমাকে নিয়ে গেল। নার্সটা যখন আমাকে ভেতরে ঢোকার জন্য দরজা খুলে দিলো আগুনের ধারে চেয়ারে বসা অবস’ায় ও মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। এতো বদলে গিয়েছে ও! কঙ্কালসার চেহারা। আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।
‘এই মাত্র তোমার কথা শুনলাম – সাথে সাথেই ছুটে এসেছি। এ কী হাল হয়েছে তোমার?’
ভিক্টরের চোখ জলে ভরে গেল।
‘ঠিক আছে, তোমার কিছু বলতে হবে না। তোমাকে আমি যেমন বুঝি, আর কে তেমন বুঝবে বলো। সব ঠিক হয়ে যাবে। শান- হও।’
কথা বলতে গিয়েও পারলো না ও। চেয়ারটাতেই চুপ করে বসে থাকলো। ওর গায়ে একটা ড্রেসিং গাউন, গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে নামছে। জীবনে কখনও এতো অসহায় বোধ করিনি। ও একটা চেয়ার দেখিয়ে দিলো। খেয়াল করিনি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। চেয়ারটা টেনে নিয়ে ওর চেয়ারের পাশে বসলাম। মনে মনে ভাবলাম নিজে থেকে ও যদি কোন কিছু বলতে না চায়, তাহলে কোন কিছু জিজ্ঞেস করবো না। আমি ওকে কেবল সান-্বনা দিতে আর সহযোগিতা করতে চাচ্ছিলাম।
অনেকক্ষণ পর ও কথা বললো। ওর গলার স্বরটা পর্যন- চিনতে পারলাম না।
‘অ্যানা চলে গেছে। তুমি কি শুনেছো, অ্যানা চলে গিয়েছে?’
আমি মাথা নাড়লাম। ওর হাঁটুর উপর আমার হাত দুটো রাখলাম। আমার শরীরের চাপ ও উত্তাপ দিয়ে ওকে আশ্বস- করতে চাইলাম, ঠিক ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে যেমনভাবে ওকে সাহস দিতাম, ওর বয়স যেন এখন আমার মতো ত্রিশ বছর পার হয়নি, এখনও যেন ও সেই ছোট্ট খোকাটি রয়ে গিয়েছে।
‘জানি আমি শুনেছি। সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখো। ও আবার ফিরে আসবে। ও তোমার কাছে আবার ফিরে আসবে। তুমি ওকে ফিরে পাবেই আবার।’
ও এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো। কখনও এমন হতাশা, এমন গভীর হতাশা আর অপরাধবোধের মূর্ত প্রতীক চোখে দেখিনি।
‘না, ও ফিরবে না, ও কখনোই ফিরবে না। ওকে তো আমি ভাল করে চিনি, ও যা চেয়েছিল, তাই ও পেয়েছে।’
যা ঘটে গিয়েছে সেটাকে ও এমন গভীরভাবে মেনে নিয়েছে দেখে আমার মন বেদনায় মুষড়ে গেল। ভিক্টর এমনিতে খুব শক্ত আর ধীরসি’র প্রকৃতির পুরুষ, অথচ এমনভাবে ওকে ভেঙে পড়তে দেখে আমি অত্যন– বেদনা বোধ করলাম।
‘অ্যানা কার সাথে চলে গেল? অ্যানার সাথে ওর কখন কিভাবে পরিচয় হলো?’
আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আনা অন্য কোন পুরষের প্রতি আসক্ত হয়ে ভিক্টরকে ত্যাগ করেছে।
ভিক্টর অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকালো, ‘কি বলছো তুমি? ও তো কারো সাথে চলে যায়নি। তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। যদি তা’ হতো, তাহলো তো বলার কিছু ছিল না।’
ও আবার চুপ করে গেল, সর্বস্বহারা হতভাগ্য মানুষের মতো হতাশায় হাতদুটো দুই দিকে প্রসারিত করলো চরম, বেদনায় অসহায় ভঙ্গিতে। সেই সাথে আবার অপ্রতিরোধ্য কান্নায় ভেঙে পড়লো ও, কিন’ এবারে ওর অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠলো পুঞ্জিভূত ভীতিময় ক্রোধ, অক্ষমতা আর ক্ষমতাশালী শক্তির সাথে দ্বৈরথে হেরে যাওয়া দুর্বল শক্তিহীনতা।
‘ওই পাহাড়ই ওকে টেনে নিয়েছে, ওই অভিশপ্ত মন্টে ভেরিটা। ওখানে একটা গোপন সমপ্রদায় বাস করে, একটা গুপ্ত দল থাকে ওখানে, ওরা স্ব্বাভাবিক সামাজিক জীবনধারা থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে রাখে, ওখানে ওই পাহাড়ের মধ্যে ওরা থাকে। আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি, এমন কিছু পৃথিবীতে থাকতে পারে। আমি জানতাই না। এখন অ্যানা ওখানে – ঐ অভিশপ্ত পাহাড়ে – ঐ মন্টে ভেরিটায়।
আমি ওখানে ওই নাসিং হোমে সারা সন্ধ্যা ওর সাথে থাকলাম। এই দীর্ঘ সময় ধরে ধীরে ধীরে সমস- ঘটনা টেনে বের করতে পারলাম ওর কাছ থেকে।
যাত্রাটা ছিল বেশ আরামদায়ক আর কোন অঘটন ছাড়াই নিরাপদ। মন্টে ভেরিটার পাদদেশে পৌঁছে ওরা ঠিক করলো আশেপাশের এলাকাটা একটু ভালভাবে দেখেশুনে নেবে। আর এখানেই ওরা প্রথম অসুবিধার সামনে পড়লো। এলাকাটা ভিক্টরের কাছে বেশ অপরিচিত মনে হলো; অধিবাসীরাও কেমন যেন অসামাজিক, বৈরীভাবাপন্ন আর কেমন গোঁয়ার। অন্য সব পাহাড়ী অধিবাসীরা যেমন বন্ধুভাবাপন্ন থাকে, এরা তেমন না। ওরা এমন একটা আঞ্চলিক উচ্চারণে কথা বলছিল, যা ভিক্টরের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল, ওদের হাবভাবও কেমন নির্বোধের মতো।
‘আসলে আমার তখন তেমনই মনে হয়েছিল। খুবই অসামাজিক ওদের আচরণ, অশিক্ষিত, অনুন্নত আর অসভ্য, মনে হলো যেন এর আগে যেখানেই গিয়েছি পাহাড়ে ওঠার জন্য, সেখানকার অধিবাসীদের কাছে থেকে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সহায়তা না পেলেও, যেটা সবসময়েই, সবজায়গাতেই পেয়েছি, সেটা হলো ওদের কেউ না কেউ পথ প্রদর্শক হিসাবে আমাদের সঙ্গে থেকেছে, পথের নিশানা দেখিয়ে দিয়েছে, তাই নয় কি? কিন’ এখানে সব কিছুই আলাদা।’
‘আমি আর অ্যানা যখন মন্টে ভেরিটাতে ওঠার সহজ আর ভাল পথের সন্ধান পাবার জন্য একে ওকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। ওরা কেউ মুখ খুললো না। যত প্রশ্নই করি না কেন ওরা বোকার মতো আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে চলে যায়। এদের মধ্যে একজন খালি বললো, আমাদের এখানে কোন গাইড পাবে না, আর পাহাড়টা খুবই দুর্গম আর এ যাবৎ কেউ এর চুড়োয় ওঠেনি।’
ভিক্টর থামলো। আমার দিকে আগের মতো হতাশাপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
‘তোমাকে কি বলবো। এই সময়েই আমি সবচেয়ে বড় ভুল করলাম, আমার বোঝা উচিৎ ছিল, যতোই চেষ্টা করি না কেন, এবারের এই অভিযান বিফলতায় পর্যবসিত হতে যাচ্ছে। অ্যানাকে আমার বোঝানো উচিৎ ছিল, আমরা এখান থেকে ফিরে গিয়ে অন্য কোন পাহাড়ে ওঠার চেষ্টা করি, যেটা আমা’ের পরিচিত পরিবেশের কাছাকাছি, যেখানে অধিবাসীগুলো একটু সহযোগিতা করবে, যা’ের ব্যবহার বেশী ঘনিষ্ট। কিন’ তখন কেমন মনে হতে থাকে জানোই তো, মনটা একটু বেশী জেদী হয়ে ওঠে, পাহাড়ে ওঠা যতই দুর্গম হয়ে ওঠে, শৃঙ্গজয়ের নেশা আরও বেড়ে যেতে থাকে আর মন্টে ভেরিটা এমন একটা পাহাড়, যেটাকে যতোই দুর্গম মনে হতে থাকে, ওটাকে জয় করার জেদটা ততো বেশী বেড়ে যায়।’
ও আবার চুপ করে গেল। ফাঁকা দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ।
‘তুমি তো জানো, আমার আবেগ একটু কম, কবির কোমল অনুভূতি আমার মধ্যে নেই। আমরা যখন কোন পাহাড়ে উঠেছি, আমি সব সময়েই আবেগশূন্য আর কঠিন থাকতে পারতাম আর তুমি আবেগে অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠতে। মন্টে ভেরিটা সৌন্দর্যে অতুলনীয়। আমি এমন সুন্দর অপরূপ পাহাড় আগে কখনও দেখিনি। তুমি আর আমি এর চেয়ে অনেক উঁচু, অনেক দুর্গম আর ভীতিকর পাহাড়ে উঠেছি, মন্টে ভেরিটা ওগুলোর মতো নয়। এটা অনেক বেশী ভয়াল সুন্দর পাহাড়।’
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ও আবার কথা বলতে আরম্ভ করলো, ‘আমি অ্যানাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি করবো এখন আমরা? কোন রকমে ইতঃস-ত না করেই ও বললো, আমরা উপরে উঠবো। আমি কোন প্রতিবাদ করলাম না। আমি যেন জানতাম, ও এমন কথা বলবে। সমস- এলাকাটা আমাদেরকে মোহগ্রস- করে রেখেছিল।’
ওরা উপত্যকা পার হয়ে উপরে ঊঠতে আরম্ভ করলো।
‘দিনটার শুরুটা ছিল খুবই সুন্দর, হালকা মৃদু বাতাস, আকাশে মেঘের চিহ্নমাত্র ছিল না, উজ্জ্বল, ঝলমলে সূর্যের আলো, এমন আবহাওয়া কেমন হয় তুমি তো জানোই, পরিবেশটা থাকে অদ্ভুত শান-, সুন্দর, শীতল আর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। স্নোডনে ওঠার ঘটনাটা নিয়ে অ্যানার সাথে আমি বেশ ঠাট্টা-তামাশা করেছিলাম, শপথ করিয়ে নিয়ে ছিলাম, ও যেন কখনোও আমাকে ছেড়ে এগিয়ে না যায়। ও একটা হালকা শার্ট আর খাটো স্কার্ট পরেছিল, ওর চুলগুলো ছিল খোলা, কাঁধের উপর ঝুলছিল। ওকে খুব – খুবই সুন্দর লাগছিল।’
এ পর্যন- শুনে আমার মনে হলো, নিশ্চয়ই পাহাড়ে ওঠার সময় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, আর ওর মন সেই দুর্ঘটনার প্রভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারছে না। অ্যানার আকস্মিক মৃত্যু ওকে হতভম্ব করে দিয়েছে। সম্ভবত অ্যানা পড়ে গিয়েছিল। ভিক্টর ওকে পড়ে যেতে দেখেছিল, কিন’ ওর কিছুই করার ছিল না, কোনই উপকারে আসতে পারেনি ও অ্যানার সেই অনি-ম সময়ে। পরে ও ফিরে আসে বিধ্বস- মন আর ভারাক্রান- হৃদয় নিয়ে, আর এখন বলছে অ্যানা এখনও মন্টে ভেরিটাতেই আছে। এমন ঘটনা অনেক শুনেছি। ভিক্টরের কথা আবার আরম্ভ হতে চমক ভাঙলো।
‘সন্ধ্যার কিছু আগে আমরা উপরের একটা ছোট্ট গ্রামে এসে থামলাম। এই পথটা পার হতেই সারা দিন কেটে গিয়েছিল। শিখরে উঠতে আরও তিন-চার ঘন্টা লাগবে মনে হলো। গ্রামটাতে দশ-বারোটা কুঁড়েঘর অল্প একটু জায়গাতে গাদাগাদি করে বসানো। আমরা প্রথম কুঁড়ে ঘরের ‘িকে এগিয়ে গেলাম আর তখনই আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো।’
ভিক্টর একটু সময়ের জন্য থামলো।
‘অ্যানা আমার চেয়ে কয়েক পা এগিয়ে ছিল, লম্ব্বা লম্ব্বা পা ফেলে একটু দ্রুত হাঁটছিল, জানোই তো ও কেমনভাবে হাঁটে। এমন সময় দেখি দুই-তিনজন গ্রামবাসী, কয়েকটা কাচ্চাবাচ্চা আর ছাগল নিয়ে রাস-ার ডান দিকের ক্ষেত পার হয়ে এগিয়ে আসছিল। অ্যানা ওদের দেখে হাত তুলে অভিবাদন জানালো। কিন’ ওর দিকে ওদের চোখ পড়তেই ওরা চমকে উঠলো, আতঙ্কিত হয়ে ছেলেমেয়েগুলোর হাত খামচে ধরে টানতে টানতে তাড়াহুড়ো করে কাছের কুঁড়েঘরে ঢুকে গেল, মনে হলো নরকের একদল শয়তান ওদেরকে তাড়া দিয়েছে। আমি ওদের দরজা-জানালা ঝটপট করে বন্ধ করে দিতে শুনলাম। সত্যিই খুব আশ্চর্যজনক ঘটনা। এমনকি ছাগলগুলোও ভয় পেয়ে যেটা যেদিকে পারলো ছুটে পালিয়ে গেল।’
ভিক্টর বললো, ‘এই অস্ব্বাভাবিক আর অসাধারণ স্বাগত জানাবার ধরণ নিয়ে অ্যানার সাথে রসিকতা করতে গেলাম। কিন’ ওকে যেন কেমন অপ্রস’ত হয়ে যেতে দেখে চুপ করে গেলাম। ও ভেবে পাচ্ছিল না, ও এমন কি করলো যার জন্য ওরা অমন আতঙ্কিত হয়ে গেল।’
ভিক্টর এগিয়ে গিয়ে প্রথম কুঁড়ে ঘরের দরজায় ধাক্কা দিলো। কেউ দরজা খুললো না, ভিক্টর ঘরের ভিতর থেকে ফিস্ফিস্ কথা আর শিশুর কান্না শুনতে পেলেও কেউ কোন সাড়াশব্দ করলো না। ও ধৈর্য হারিয়ে চিৎকার করে ডাকাডাকি আরম্ভ করে দিলো। এতে কাজ হলো, জানালার একটা কপাট একটু ফাঁক হলো আর সেই ফাঁক দিয়ে একটা পুরুষ মুখ বের করে ওর দিকে উঁকি দিলো। ভিক্টর ওকে দেখে আশ্বস- করার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে হাসলো। ওর হাসিতে আশ্বস- হয়েই সম্ভবত পুরুষটি জানালাটা পুরোটা খুলে ভিক্টরের সাথে কথা বলতে রাজী হলো বলে মনে হলো আর তখনই ভিক্টর কথা বলতে পারলো।
প্রথমে ও যা-ই বলে তাতেই ও অসম্মতি জানাতে থাকে। অবশেষে মনে হলো ও ওর মত পরিবর্তন করে ঘরের দরজা খুলে কপাটের উপর এসে দাঁড়ালে। লোকটি ভিক্টরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অ্যানার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর ঘনঘন মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে দ্রুত আর দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলতে থাকলো আর বার বার মন্টে ভেরিটার দিকে আঙুল উচিয়ে দেখাতে থাকলো। এমন সময় ঘরের আবছা অন্ধকারের মধ্যে থেকে এক বৃদ্ধ বের হয়ে এলো, কুঁজো, দুই হাতে দুই লাঠিতে সে তার শরীরে ভার ধরে রেখেছিল। বৃদ্ধটি ওর চারপাশে জড়ো হয়ে থাকা বাচ্চাদের ধমক দিয়ে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে এলো। অন-তঃ এই বৃদ্ধ এমন উচ্চারণে কথা বলতে আরম্ভ্ব করলো, যা ভিক্টর কিছুটা বুঝতে পারলো।
‘মেয়েটা কে, ও এখানে কি করতে এসেছে?’ বৃদ্ধ সরাসরি জিজ্ঞেস করলো।
ভিক্টর বললো, অ্যানা ওর স্ত্রী, ওরা নিচের উপত্যকা থেকে এসেছে পাহাড়ে উঠতে, ওরা ট্যুরিস্ট অবকাশ কাটাতে এখানে এসেছে। ওরা রাতটা এই গ্রামে থাকতে পারলে কৃতজ্ঞ বোধ করবে। ও বৃদ্ধের সাথে কথা বলতে থাকলেও বৃদ্ধ ওর দিকে না তাকিয়ে এক দৃষ্টিতে অ্যানার ‘িকে তাকিয়ে থাকলো।
‘তুমি বলছো, ও তোমার স্ত্রী? মন্টে ভেরিটা থেকে ও আসেনি?’ বৃদ্ধটি অবিশ্বাসের গলায় জিজ্ঞেস করলো।
ভিক্টর উত্তর দিলো, ‘ও আমার স্ত্রী, আমরা ইংল্যান্ড থেকে এসেছি। আমরা এই প্রথম এই এলাকায় এসেছি গ্রীষ্মের ছুটিতে। আমরা এর আগে কখনও এখানে আসিনি।’
বৃদ্ধটি পিছন ফিরে প্রথম লোকটির সাথে নিচু গলায় কি সব কথা বললো, তারপর ওরা ঘরের ভিতরে গিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো। এর পর একজন মহিলা বের হয়ে এলো, চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ, প্রথম লোকটির চেয়েও অনেক বেশী আতঙ্কিত। ও দৃশ্যতঃ থরথর করে কাঁপছিল। ভিক্টর দেখলো মহিলার দৃষ্টি অ্যানার দিকে আটকে আছে, অ্যানার উপসি’তিই ওকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল।
ভিক্টর আবার বললো, ‘অ্যানা আমার স্ত্রী। আমরা নিচের উপত্যকা থেকে এসেছি।’
এতক্ষণ পর বৃদ্ধটি এগিয়ে এসে ওদের বক্তব্য সমর্থন করলো।
‘তোমাকে বিশ্বাস করলাম। এসো ঘরের ভেতর এসে বিশ্রাম নাও। তুমি যখন বলছো তোমরা উপত্যকা থেকে এসেছো, তাহলে ঠিক আছে। বোঝই তো আমাদের সাবধান থাকতে হয়।’
ভিক্টর অ্যানাকে ইশারা করতে ও এগিয়ে এসে ভিক্টরের পাশে এসে দাঁড়ালো। ওরা এগিয়ে এসে দরজার গোড়ায় দাঁড়ালো। ঘরের ভিতর থেকে মহিলাটি এগিয়ে এসে অ্যানাকে ভালো করে দেখলো। এখন ওর চোখের সেই আতঙ্কের ভাব কেটে গিয়েছে। বৃদ্ধ ওদেরকে ঘরের ভিতরে আসতে বললো। ঘরটা ফাঁকা, কিন’ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, এপাশে আবার আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে।
কাঁধের বোঁচকা নামাতে নামাতে ভিক্টর বৃদ্ধকে বললো, ‘আমাদের কাছে খাবার আছে, ঘুমাবার ম্যাট্রেসও আছে। এ নিয়ে আপনাদের ঝামেলায় ফেলার মতো বোকা আমরা নই। আমাদেরকে যদি এই ঘরে খাবার খেতে আর মেঝেতে শোবার অনুমতি দেন তাহলে খুব আনন্দিত হবো, এর চেয়ে বেশী কিছু চাই না।’
বৃদ্ধটি মাথা ঝাঁকালো, ‘ঠিক আছে। আমাদের কোন আপত্তি নেই। তোমার কথা আমার বিশ্বাস হয়েছে।’
ওদেরকে ঐ ঘরে রেখে বৃদ্ধটি পাশের ঘরে চলে গেল। ভিক্টর আর অ্যানা দুজনেই আশ্চর্য হলো ওদের এই অদ্ভুত ব্যবহার দেখে। ওরা ভেবেই পেলো না প্রথমে ওদেরকে দেখে ওরা ঐরকম অস্বাভাবিক আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিল, আর ওরা বিবাহিত দম্পতি আর নিচের উপত্যকা থেকে এসেছে জানতে পেরে ওদেরকে ওখানে থাকার অনুমতিই বা দিলো কেন। ওরা রাতের খাবার খেয়ে ব্যাগ খুলে জিনিষপত্র বের করতে থাকলো, এসময় বৃদ্ধটি হাতে দুধ আর পনির নিয়ে ঘরে ঢুকলো। মহিলাটি ঘরের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলো, কিন’ যুবকটি উৎসাহ দমন করতে না পেরে বৃদ্ধের পাশে এসে দাঁড়ালো। ভিক্টর বৃদ্ধের আতিথেয়তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানালো। বললো, ওরা এবার ঘুমাবে আর সকালে সুর্য ওঠার পর পাহাড়ে উঠবে।
ও জিজ্ঞেস করলো, ‘ওঠার পথ কি সহজ?’
বৃদ্ধ উত্তর দিলো, ‘খুব কঠিন না। আমি তোমার সঙ্গে যাবার জন্য কাউকে দিতে পারতাম, কিন’ কেউ যেতে রাজী হবে না।’
ওর হাবভাব কেমন অস্বাভাবিক, ভিক্টর বললো, কারণ ও বার বার অ্যানার দিকে অস্বসি-কর ভঙ্গিতে তাকাচ্ছিল।
বৃদ্ধ বললো, ‘তোমার স্ত্রী এখানে ভালই থাকবে। আমরা ওর দেখাশুনা করবো।’
ভিক্টর উত্তর দিলো, ‘আমার স্ত্রী আমার সাথে শিখরে উঠবে। ও এখানে থাকবে না।’
ওর কথা শুনে বৃদ্ধের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।
‘তোমার স্ত্রীর মন্টে ভেরিটাতে চুড়াতে না যাওয়াই মঙ্গল হবে। ওটা বিপজ্জনক।’
অ্যানা জিজ্ঞেস করলো, ‘মন্টে ভেরিটার চূড়াতে যাওয়া আমার জন্য বিপজ্জনক হবে কেন?’
বৃদ্ধটি অ্যানার দিকে তাকালো, ওর চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ আরও গভীর হলো।
‘মহিলাদের জন্য আর অল্পবয়স্ক মেয়েদের জন্য খুবই বিপজ্জনক।’
অ্যানা জিজ্ঞেস করলো, ‘কিন’ কেন? কি ভাবে? তুমি আমার স্বামীকে তো বললে পথটা কঠিন হবে না।’
বৃদ্ধটি উত্তর দিলো, ‘পথ তোমার জন্য কঠিন, তাতো আমি বলিনি। আমার ছেলে তোমাকে পথ দেখিয়ে দিতে পারবে। বিপদের কারণ . .’
কথা ক’টি বলে বৃদ্ধটি থামলো তারপর সে এমন একটি শব্দ উচ্চারণ করলো যা ভিক্টর কিম্বা অ্যানা কেউ বুঝতে পারলো না। শব্দটা অনেকটা সাসেরডোটেসা কিম্বা সাসেরডোজিও শোনালো।
ভিক্টর জিজ্ঞেস করলো, ‘শব্দটার মানে তো মহিলা পুরোহিত কিম্বা পুরোহিততত্ত্ব । এমন কোন কথা তো আমি আগে শুনিনি। এর মানে কি?’
বৃদ্ধের আচরণ কেমন আতঙ্কিত, অসি’র, ও একবার ভিক্টরের দিকে একবার অ্যানার দিকে তাকাতে থাকলো।
তারপর ভিক্টরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘চূঁড়ায় ওঠা কিম্বা নেমে আসা তোমার পক্ষে সহজ। কিন’ তোমার স্ত্রীর জন্য কঠিন হবে। ওদের শক্তি অপরিসীম, ঐ সাসেরডোটেসাদের। আমারদের এই গ্রামে, আমরা আমাদের মেয়ে আর স্ত্রীদের নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।’
ভিক্টর বললো, বৃদ্ধটির কথা শুনে আফ্রিকার এক বর্বর উপজাতির কথা ওর মনে পড়ে গেল। যারা অন্য সব উপজাতির মেয়েদের ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে উপভোগ করে।
ও অ্যানাকে বললো, ‘আমি বুঝে পাচ্ছি না এই বুড়ো কি বলতে চাচ্ছে। আমার মনে হয় কোন কুসংস্কার ওদেরকে অন্ধকারে রেখেছে। তুমি ওয়েলস্-এর অধিবাসী, তুমি হয়তো বুঝবে।’
ও হেসেছিল, আনার সাথে ঠাট্টা করে বিষয়টা হালকা করে ফেলতে চেয়েছিল। পরে ক্লানি-তে বিছানা করে ওরা আগুনের ধারে ঘুমাবার জন্য তৈরী হলো। বৃদ্ধকে শুভরাত্রি জানিয়ে কিছুক্ষণের মধ্য্েই ওরা ঘুমিয়ে পড়েছিল।
রাতে ঘুম খুব ভাল হয়ে ছিল ভিক্টরের, এধরনের শারীরিক পরিশ্রমের পর ঘুম ভাল হওয়াই স্বাভাবিক। বাইরে মোরোগের প্রথম ডাকের সাথে সাথেই ভোরে খুব ভেঙ্গে গেল ওর। বাইরে তখনও অন্ধকার। পাশে ফিরে দেখলো অ্যানার ঘুম ভেঙ্গেছে কিনা। অ্যানার বিছানাটা ভাঁজ করা, আর ঘরে অ্যানা নেই।
বাড়িটাতে তখনও কেউ জাগেনি, ভিক্টর বললো, কেবল মোরগের ডাক শোনা যাচ্ছে চারদিক থেকে। ভিক্টর উঠে জুতো আর কোট পরে বাইরে এসে দাঁড়ালো।
বাইরের আবহাওয়া ঠান্ডা, শান-, নিঃশব্দ, সূর্য ওঠার আগে প্রকৃতি যেমন স্নিগ্ধ থাকে, গাঢ় ছাই রঙ্গের আকাশে দুই তিনটে তারা তখনও ঝিক্ঝিক্ করছে। মেঘ নিচের উপত্যকা ঢেকে আছে, কয়েক হাজার ফিট নিচের এই গ্রামটা আর উপরের শৃঙ্গটার চারধার পরিষ্কার, স্পষ্ট হয়ে উঠছে।