সায়েম মাহমুদের নিস্ফল দ্বৈরথ অধ্যায় ১১

২২ ডিসেম্বর থেকে ডেলটা হাসপাতালে রেডিয়েশন দেয়া আরম্ভ হলো। সপ্তাহে পাঁচ দিন, শনিবার থেকে বুধ বার। বৃহষ্পতি আর শুক্রবার দেওয়া হতো না। সপ্তাহে পাঁচ দিন শেওড়াপাড়া থেকে সিএনজি ট্যাক্সিতে করে মিরপুরের বাংলা কলেজের কাছের ডেলটা হাসপাতালে গিয়ে রেডিয়েশন দিতে হবে।

প্রথম দিকে পপি ফিহার সঙ্গে যেতো। টাকা জমা দিয়ে কখন রেডিয়েশন দেওয়ার ডাক আসবে তার অপেক্ষা করতো। পরে যখন আমি ফিহার সাথে যেতাম তখন ডেলটা হাসপাতালের চমৎকার নিয়ম-কানুন দেখে খুশি হয়েছি। রেডিয়েশন দিতে দেড় দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হলেও তার মধ্যে যে অপূর্ব শৃংখলা তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। এই দীর্ঘ সময় ফিহা অত্যন- শান-ভাবে চুপ করে বসে অপেক্ষা করতো।

অনেক সময় দীর্ঘ সময় বসে থাকার অস্বসি- দূর করার জন্যে আমি উঠে হাঁটতাম, কিন’ ফিহা ঠিক একইভাবে চুপ করে বসে অপেক্ষা করতো। কোন কথাও বলতো না এই সময়ে। রেডিয়েশন দেওয়া শেষ হলে বেরিয়ে এসে আবার একটা ট্যাক্সি নেয়ে সোজা বাসায় চলে এসে বিছানায় শুয়ে পড়তো।

একটা একটা করে জগদ্দল পাথরের মতো দিনগুলো পার হতে থাকলো।

২০ জানুয়ারী রেডিয়েশন দেওয়া শেষ হলো। এটেন্ডিং ডাক্তার শেষ দিন বললেন, ‘আপনারা আপনাদের প্রফেসরের সাথে দেখা করেন। আমাদের কাজ শেষ।’

পরের দিন প্রফেসর পারভিন আখতারের চেম্বারে গেলাম। তিনি বললেন, রেডিয়েশনের প্রভার কম পক্ষে দুই সপ্তাহ থাকে। বিশ্রাম করো। আর একটা মুখে খাওয়ার কেমোথেরাপিও ওষুধ দিচ্ছি চলুক।

শেওড়াপাড়ার বাসায় ফিহা শুয়ে বসে থাকে। নিয়ম করে ওষুধ খায়। খাওয়া-দাওয়াও ভালই করে।

দুই-তিন দিন পর হঠাৎ খেয়াল করলাম ও যেন স্বাভাবিকভাবে হাঁটছে না। একটু যেন ঝুঁকে ঝুঁকে, দুলে দুলে হাটছে।

পপি জিজ্ঞেস করলে, ‘তুমি ওভাবে হাটছো কেন, ভালো করে হাঁটো।’

ফিহা বললো, ‘কদিন ধরে দেখছি বাম পায়ে যেন জোর পাই না, হাঁটতে একটু অসুবিধা হচ্ছে, মা।’

সে দিনই আমি ফিহার বিছানার পাশে বসে আছি, হঠাৎ ও খুব নিচু গলায় বললো, ‘আব্বু জানো, আমার মাথার বাম দিকটায় কেমন যেন ব্যাথা, বেশ ভার হয়ে থাকে। যেন ধরে আছে সব সময়। আর বাম কানেও যেন একটু কম শুনছি, কেন যে।’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কবে থেকে, বাবা।’

ও বলরো, ‘তা’ প্রায় আট-দশ দিন হবে।’

আমি আর কি বলবো, আমার বুক তো হীম হয়ে এলো। শুধু বললাম, ‘এবার প্রফেসরের সাথে দেখা হলে এ কথাটা বলো।’

ফিহা আর কোন কথা বললো না।

নিদিষ্ট দিনে প্রফেসরের কাছে যেতে ফিহার ওজন নিলেন। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখলেন, রক্তচাপ দেখলেন। সব রিপোর্ট স্বাভাবিক দেখে খুব খুশি হয়ে বললেন, ‘এখন থেকে তুমি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারো।’

সঙ্গে সোনালী ছিলো, ও জিজ্ঞেস করলো, ‘আমার ভাইটা তো ভার্সিটিতে ক্লাস করার জন্যে অসি’র হয়ে আছে। ও কি ক্লাসে যাবে?’

প্রফেসর বললেন, ‘যাক না। যদি ভাল লাগে যাক ক্লাস করুক।’

ফিহা নিষ্ঠার সাথে ওকে যে সব ওষুধ খেতে বলা হতো সবগুলো সঠিক সময়ে খেতো। অনেক সময় ও নিজেই আমাকে মনে করিয়ে দিতো ওকে ওষুধ দেওয়ার জন্যে।

প্রফেসর নতুন যে ওষুধটা খেতে দিয়েছিলেন, সেটা খেয়ে ফিহার আবার বমি হতে থাকলো। ঘরে শুয়ে বসে থাকা অবস’ায় বমি হলেই ও ছুটে যেতো টয়লেটে।

কয়েক দিন বললাম, ওখাবে দৌড় দিয়ে টয়লেটে যেয়ো না। ঘরেই বমি করো। আমি পরিষ্কার করে দেবো।

ও শুনতো না। আমি একটা ছোট গামলাও এসে দিলাম ওর বিছানার পাশে কিন’ ও বমি পেলে অবধারিতভাবে টয়লেটে দৌড় দিয়ে যায়। ঘরে বমি করলে বাবা-মার কষ্ট হবে। ও কাউকে কষ্ট দিতে চাইতো না। সব কষ্ট ও একা বহন করতে চাইতো।

রেডিয়েশন দেওয়ার পর যত দিন বাসায় ছিলো ততদিন ও খাঁচায় পোরা বাঘের মতো শুধু ছটফট করতো। ওর বন্ধু পারভেজের সাথে যোগাযোগ করে মাস্টার্সের ক্লাসে ভর্তিও হয়ে গিয়েছিলো। বাসায় বসে থেকেই বন্ধূদের সাথে যোগাযোগ করে যে বিষয়ে ও থিসিস করবে সে বিষয়ের ওপর নানা সহায়ক বই আর ইন্টারনেট থেকে গাদা গাদা তথ্য ডাউনলোড করে জমা করতে লাগলো। মাস্টার্সের ক্লাস অনেক দিন আরম্ভ হয়েছে। ও অনেকগুলো ক্লাস করতে পারেনি। সেই দুঃখে ও সব সময় মন খারাপ করে থাকতো। তবু এর মধ্যে নানা নোটপত্র জোগাড় করে চেষ্টা করতে থাকলো এই পিছিয়ে পড়াটাকে পূরণ করতে।

প্রফেসর যেই ক্লাসে যওয়াার অনুমতি দিলেন, ওর সারা মুখ আনন্দে ভরে গেল।

৩ ফেব্রুয়ারী থেকে ক্লাস করা আরম্ভ করলো।

আমরা বলে দিয়েছিলাম, একটুও হাটবে না। বাড়ির নিচে থেকে ট্যাক্সি পেলে ভালো, না পেলে রিক্সায় করে মোড়ে গিয়ে ট্যাক্সিতে করে তবে ভার্সিটিতে যাবে। ফেরার সময়ও ট্যাক্সিতে করে ফিরবে।

ও নিষ্ঠার সাথে সেটা পালন করতে লাগলো। প্রথম সপ্তাহের প্রায় পাঁচ দিনই ক্লাস করলো ও। তৃতীয় দিন ক্লাস থেকে ফিরে ও বললো ওর কোমরে ব্যাথা করছে। আমি ভাবলাম ফেব্রুয়ারীর সকালের ঠাণ্ডায় ওর কোমরে ব্যাথা হয়েছে কারণ প্রথম দুই দিন জ্যাকেট নিয়ে যায়নি। আর প্রথম দুই দিনই সকালে খুবই ঠাণ্ডা পড়েছিলো। আমরা ওকে ভারি গরম কাপড় পরতে বললাম, কোমরে একটু গরম শেঁক দেওয়ার ব্যবস’া করলাম। ব্যাথাটা খুব একটা কমলো না।

দ্বিতীয় সপ্তাহটা ও ভার্সিটিতে গেল না। তৃতীয় সপ্তাহটার পাঁচ দিনই ও আবার ভার্সিটিতে গেল। ২৫ ফেব্রুয়ারী ও শেষ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করে এলো।

আমি সেদিন বাংলাবাজারে একটু আমার প্রকাশকের কাছে গিয়েছিলাম। দুপুরের দিকে শুনতে পেলাম পিলখানায় বিডিআর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গোলমাল হচ্ছে।

এমন সময় ফিহা আমার মোবাইলে ফোন দিলো, ‘আব্বু তুমি কোথায়? তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসো।’

আমি, জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কোথায়?’

ও বললো, ‘আমি এখনই ভার্সিটি থেকে রওনা দিয়েছি।’

৩৬

ফিহা বাসায় শুয়ে-বসে কয় দিন বিডিআর-এর ঘটনা দেখলো টিভিতে। এ সময়ে টয়লেটে যাওয়া ছাড়া ও আর প্রায় হাঁটতোই না। কচিৎ কখনও আমাদের ঘরে এসে আমাদের বিছানায় একটু শুয়ে থাকতো।

এ সময়েই খেয়াল করলাম ওর হাঁটতে আরও যেন অসুবিধা হচ্ছে। প্রফেসর ওকে যে নতুন ওষুধটা খেতে দিয়েছিলেন, সেটা খাওয়ার পর ওর খাওয়ার রুচি আবার খুব করে গেল আর বমি করার প্রবণতা বেড়ে গেল। বমি পেলে ও অবধারিতভাবে দ্রুত পায়ে টয়লেটে গিয়ে বমি করতো।

একদিন সন্ধ্যায় ও টয়লেট থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার ধরে অত্যন- হৃদয়বিদারক চিৎকার করে উঠলো। ওর দীর্ঘ এই সংগ্রামে এই প্রথম আমি ওর মুখ থেকে অমন কষ্টকর চিৎকার কখনও করতে শুনিনি।

আমি আতঙ্কিত হয়ে পপিকে ডাক দিলাম, ‘এই ফিহার মা, শিগ্রি আসো এখানে।’

আমার ঐ ডাক শুনে ফিহা আমার দিকে তাকালো। আর ওর সারা জীবনে কখনও যা করেনি, প্রথমবারের মতো আমার ওপর রাগ করে উঠলো, প্রায় চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘আম্মুকে ডাকছো কেন?’

এটাই প্রথম আর শেষবারের মতো ফিহা কেবল আমাকে একবার জানালো ক্যানসারের যন্ত্রণা কত ভয়াবহ হতে পারে।

অপারেশনের পরের আট মাস প্রতি মুহূর্তে কি ভয়াবহ যন্ত্রণা ও সহ্য করে গিয়েছে। একবারও সে যন্ত্রণার উত্তাপ ও আমাদের দু’জনকে পেতে দেয়নি।

আমি আর পপি দুজনেই ওকে বলেছিলাম ঘরেই বমি করতে দ্রুত পায়ে টয়লেটে না যেতে। কিন’ ও একদিনও আমাদের কথা শুনতো না। আসলে ঘরে বমি করলে সে সব ময়লা আমাকে অথবা ওর মাকে পরিষ্কার করতে হবে। ফিহা আমাদের সে কষ্টটুকুও দিতে চাইতো না।

এমনই এক দিন সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ ওর বমি পেলো, ও দৌড় দিয়ে টয়লেটে যেতে গিয়ে টয়লেটের সামনে গিয়ে কোমরে জোরে মোড়া খেয়ে ‘ও বাবা গো’ বলে চিৎকার করে বসে পড়লো।

ও টয়লেটের দরজাটা খোলার সময় পায়নি। সাধারণত ওর বমি করতে যাওয়া দেখলেই আমি অথবা ওর মা কাছে গিয়ে ওর পিঠে হাত দিয়ে একটু চাপ দিয়ে রাখতাম, যাতে ও কিছুটা শক্তি পায়। সে দিনও আমি কাছেই ছিলাম।

ওর চিৎকার শুনে এগিয়ে যেতে আমাকে দেখে ও আর একবার চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘আমার কোমরটা ধরে শিগ্রি।’

আমি ছুটে গিয়ে হাত দিয়ে ওর কোমরের ওপর চাপ দিলাম। আর এক হাতে টয়লেটের দরজাটা খুলে দিলাম। দরজার সামনেই ও বমি করে দিলো।

বমির ধমক সামলে ওঠার পর নিজেই টয়লেটের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা বমিটা নিজে পনিষ্কার করলো। আমাকে যেতে দিল না।

একটু পর মুখ-হাত ধুয়ে ও যখন ঘরে এসে ক্লান- হয়ে শুয়ে পড়লো, তখন আসে- করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছিলো?’

ও একটু চুপ করে থেকে বললো, ‘কোমরে এমন জোরে মোড়া খেয়েছি যে মনে হচ্ছিলো কোমর ভেঙে যাবে।’

জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখন ব্যাথা কেমন?’

ও মাথা নাড়লো, তারপর বললো, ‘খুব বেশি।’

পরদিন ব্যাপারটা নিয়ে আমি ওর প্রফেসরের সাথে কথা বলতে, তিনি সাথে সাথে বোন স্ক্যান করতে বললেন। বললেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে টেস্টটা করতে।

এর মধ্যে প্রফেসর নজরুল ইসলাম প্রায়ই ফিহার শরীরের অবস’া সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতেন। বোন স্ক্যান করার কথা শুনে তিনি নিজেই উদ্যোগী হয়ে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের পরিচালককে ফোন করে ওর এপয়েন্টমেন্টের ব্যবস’া করে দিলেন।

বোন স্ক্যান করা যে কতো কষ্টকর তা’ আগে জানতাম না। না খাওয়া অবস’ায় নিউক্লিয়ার মেডিসেন বিভাগে যাওয়া হলো সকালবেলা। একটা ইনজেকশন দিয়ে বললো বেশি করে পানি খেতে। খালি পেটে পানি কি খাওয়া যায়? তার ওপর খালি পেটে পানি পড়ায় কেমন বমিভাব লেগে থাকে। অল্প অল্প করে পানি খাওয়া আর অপেক্ষা করা। যে ইনজেকশন দিয়েছে, তার জন্যে আবার ওকে একটা আলাদা ঘরে বসিয়ে রেখেছে।

একজন অত্যন- অসুস’, ক্যানসার আক্রান- মানুষ কিভাবে চার-পাঁচ ঘন্টা সোজা চেয়ারে বসে থাকতে পারে, তা’ নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাথায় কেন যে ঢোকে না তা’ বুঝতে পারলাম না। ইনজেকশনটা শরীরে কাজ করতে তিন-চার ঘন্টা সময় লাগে। তারপর একজন একজন করে রোগীকে স্ক্যান করতে থাকে টেকনিশিয়ান। ফিহার ডাক পড়লো বিকাল প্রায় চারটার সময়। স্ক্যান করতে আরও প্রায় চল্লিশ মিনিট সময় লাগলো। টেকনিশিয়ান বললেন পরের দিন বিকালে রিপোর্ট দেবে।

ফিহা যখন ভিতরে বুথ থেকে বের হলো তখন ও অবসন্নতার প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়েছে। কোন রকমে লিফটে করে নিচে নেমে গেট পর্যন- হেঁটে যাওয়া যে কত কষ্টকর না বলার অপেক্ষা রাখে না।

একটা ট্যাক্সি নিয়ে আমরা শেওড়াপাড়ার বাসায় চলে এলাম তাড়াতড়ি। আসার সময় হঠাৎ ফিহা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আম্মু, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।’

পপি ওকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন বাবা?’

ও বললো, ‘তুমি যে আজকে অফিসে না গিয়ে আমার সাথে ছিলে সারাদিন, এ জন্যে।’

আমি চুপ করে থাকলাম। ও আজকাল ওর মাকে খুব কাছে কাছে চাচ্ছিলো সেটা আমি লক্ষ্য করেছি।

প্রায়ই ও বলতো, ‘কি এতো কাজ করো, মা। আমার কাছে একটু বসো না কেন।’

পর দিন রিপোর্ট আনতে সেন্টারে গেলে রিপোর্টটা হাতে নিয়ে ওটার দিকে তাকিয়ে আমার মাথা ঘুরে উঠলো। ফিহার সারা শরীরের ছয়-সাত জায়গায়, ঘাড়, কাঁধ, পাঁজর আর কোমরে মেটাস্টেসিস দেখা দিয়েছে। হাড়ের জোড়াগুলো দ্রুত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। আমি মনে মনে নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এর পর? কি হবে? কবে হবে? কিভাবে ওর জীবন শেষ হবে? আর কতো কষ্ট পাবে ও? কোনভাবে কি ওর এই শেষ যাত্রা থামানো কিংবা এর গতি ধীর করা যাবে না?’

বাসায় ফিরতে ফিরতে খালি মনে হলো এ রিপোর্টটা ফিহাকে কিভাবে দেখাবো? ও তো সব রিপোর্ট দেখতে চায়, সবকিছু দেখেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। এটা তো আমি ওকে দেখাতে পারবো না।

ফিহা অসুস’ হওয়ার পর থেকে বাসায় ঢুকেই সাধারণত প্রথমেই ওর ঘরে যাই আমি। দুটো কথা বলি। আজ গেলাম না। নিজের ঘরে ঢোকার আগে ইশারায় পপিকে এ ঘরে ডেকে সব খুলে বললাম। ও কাঁদতে আরম্ভ করলো। পপিকে শান- করে একটু পরে ফিহার ঘরে গেলাম।

ওর ঘরে যেতে আমার দেরি দেখে নিশ্চয়ই ফিহা কিছু বুঝতে পেরেছিলো। যে বুদ্ধিমান ছেলে! শুধু জিজ্ঞেস করলো, ‘রিপোর্টে কি বলেছে?’

আমি ওর রিপোর্টের ব্যাপারটা হালকা করার জন্যে একটু হেসে বললাম, ‘তোমার শরীরের দুই একটা জায়গায় একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেদিন কোমরে ব্যাথা পেয়েছো না, সেখানে। প্রফেসরের সাথে আলাপ করে দেখি, তিনি কি বলেন।’

ফিহা আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না, রিপোর্টটাও আর দেখতে চাইলো না। মনে হয় ও বুঝতে পারলো, ওর রোগটা খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে।

আমার ঘরে এসে আমি মোবাইলে কয়েকজনের সাথে কথা বললাম, কিন’ কেউই কোন আশ্বাস দিতে পারলো না।

পরের দিন প্রফেসরে সাথে দেখা করলে তিনি আহমেদ মেডিকেল সেন্টারে ফিহাকে ভর্তি হতে বললেন।

৩৭

৭ মার্চ থেকে ১২ মার্চ আহমেদ মেডিকেলে ভর্তি থাকলো। ভর্তি হওয়ার পরদিনই প্রেসক্রিপশন ছাড়াই জোমেটা নামের একটা ইনজেকশন দিলো ওর চিকিৎসক প্রফেসর পারভিন শাহিদা আখতার। সন্ধ্যে থেকেই ওর প্রস্রাব আটকে গেল। পর পর দুই দিন অস্বাভাবিক কষ্ট পাওয়ার পর ওকে ক্যাথেটার দেবার পর পেটে জমে থাকা যে প্রস্রাবটা বের হয়ে এলো সেটার রঙ প্রায় রক্ত লাল।

হাসপাতাল থেকে বলা হলো একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হবে। কোথায় যেতে হবে তা অবশ্য বলে দিলো। কিন’ ওকে যখন পরীক্ষাটা করতে নিয়ে যাবো তখন হাসপাতাল থেকে বলা হলো আমি যে রোগীকে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে, তার জন্যে আমাকে অঙ্গীকারনামা সই করে দিতে হবে। রোগীর কোন কিছু হলে তার দায়ভার আমার।

আমার মাথায় তখন অন্য কোন কিছু কাজ করছিলো না। আমি আগে-পিছে না ভেবেই ওদের কাগজে সই করে ফিহাকে হুইল চেয়ারে করে নিচে নেমে ধরে গাড়িতে তুলে বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে গেলাম। অনেক কষ্ট করে ওর আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে আবার একইভাবে ওকে আহমেদ মেডিকেলে নিয়ে এলাম।

আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে পাওয়া গেল ওর একিউট নেফ্রোপ্যাথি দেখা দিয়েছে। ফিহার ডাক্তার এমন ভাব করলো, যেন ফিহা ঐ কিডনী ফেইলিওর নিয়েই ওদের ওখানে ভর্তি হয়েছে। ওরা এ নিয়ে কোন ওষুধ দিলো না বা কোন ব্যবস’া নিলো না।

ভয়াবহ গরম আর ওর কেবিনের বাতাসটা যেন চুলোর পাশে যেমন তাপ হয় ঐ রকম। ফিহা ক্রমে অসি’র হয়ে উঠতে থাকলো। এর মধ্যে রংপুর আর রাজশাহী থেকে ওর মামা আর খালারা এসে হাজির হয়েছে হাসপাতালে। ওরা এসে আমাকে গালাগাল করতে থাকলো, এভাবে ফিহাকে এখানে রাখলে ও এখানেই মারা যাবে। ওকে তো একটু আরাম দেওয়া দরকার।

আমি আসলে বুঝে পারছিলাম না কি করবো। প্রফেসর পারভিন আখতারের চিকিৎসা পদ্ধতি কি তা’ তো তিনি বলেন নি। ফিহাকে ওরা আর কোন ওষুধ দেবেন কি না, তাও জানি না।

ফিহা ওর এতদিনের চিকিৎসায় কখনও কোন অসন’ষ্টি জানায়নি বা কোন রকম অসহযোগিতা দেখায়নি। কিন’ আহমেদ মেডিকেলের অগ্নিকুণ্ডের মতো গরমে ও যেন কেমন অসি’ও হয়ে উঠলো। বার বার করে বলতে থাকলো ওকে এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্যে।

বাংলাদেশের কোন ডাক্তারই রোগীর চিকিৎসা ব্যবস’া সম্পর্কে রোগীকে বা তার আত্মীয়-স্বজনকে খুলে কিছু বলেন না। যখন তারা রোগীকে ছেড়ে দেন। তখন তার আর কিছু করার থাকে না। আমি ওদের যে এটেন্ডিং ডাক্তার ছিলো তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার ছেলের কি ব্যবস’া তারা করবেন। ওরা বললেন, শনিবারে ডেলটাতে ওরা রেফার করে দেবে। কথাটা এসে ফিহার মামা আর খালুদের বলতে ওরা বললেন, কোন চিকিৎসাই ওরা যখন দিচ্ছে না তখন শনিবার পর্যন- কেন রোগীকে ওরা রাখবে?

আমি ওদের কথায় মনে জোর পেলাম। ওদিকে ফিহার অসি’রতায়ও ওকে শান- করা দরকার বলে আমার মনে হলো।

এটেন্ডিং ডাক্তারকে বললাম, আপনারা এখনই রোগীকে ডেলটায় রেফার করে দেন। আমরা রোগীকে সকালেই ওখানে নিয়ে যাবো।

কেবিনে এসে আমার বড় ভায়রাকে ফোন করলাম ডেলটা হাসপাতালে চলে আসতে সেই সাথে ভায়রার বড় ছেলে জিয়াউল কবির বিব্বুকে বললাম ব্যাপারটা। ও বললো, ‘আমি এখনই আসছি।’

একটু পরেই ও আহমেদ মেডিকেলে চলে এলো, ততক্ষণে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ১২ মার্চ সকালে ফিহাকে নিয়ে ডেলটা হাসপাতালে ভর্তি হলাম। ভর্তির সব আনুসঙ্গিক কাজকর্ম, সব দৌড়াদৌড়ি বিব্বুই করলো।

ওকে ভর্তি করার সাথে সাথে ওখানকার ডাক্তাররা ওকে আবার রেডিয়েশন দেওয়া আরম্ভ করলেন। আরও গাদা গাদা ওষুধ আর ইনজেকশন দেওয়া আরম্ভ করলেন। এসির ঠাণ্ডার কারণেই হোক আর ঐ সব ওষুধ দেওয়ার কারণেই হোক ফিহা কিছুটা শান্ত হয়ে এলো।

আমি বুঝতে পারছিলাম ফিহার শরীর ক্রমে ভেঙে যাচ্ছে। ওর ওজন কমে যাচ্ছে, যখন বসে থাকে, বেশ একটু কুঁজো হয়ে বসে। বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না।

রেডিয়েশন দেওয়ার সময় প্রথম দিন হুইল চেয়ারে করে ওকে নিয়ে যাওয়া হলো। ও ভালভাবে হাঁটতে পারছিলো না। কিন্তু রেডিয়েশন রুমে ঢোকার আগে ও হঠাৎ খুব অস্থির হয়ে উঠলো। আমি পাশে ছিলাম, জিজ্ঞেস করলাম, ‘খুব কষ্ট হচ্ছে, বাবা?’

ও মাথা ঝাঁকালো। আমি তাড়াতাড়ি ওর হুইল চেয়ারটা ঠেলে পাশের একটা একজামিনেশন টেবিলে নিয়ে শুইয়ে দিয়ে এটেন্ডেন্টকে ডাকলাম। ওরা খুবই অভিজ্ঞ, সাথে সাথে একটা পেশেন্ট ট্রলি এনে তাতে ওকে শুইয়ে দিলো। পরে ওর সিরিয়াল মতো ওকে রেডিয়েশন দেওয়া হরে কেবিনে নিয়ে এলাম।

পর দিন সোনালী এসে আমার ওপর হম্বি-তম্বি আরম্ভ করলো, ‘কি এমন হয়েছিলো যে ফিহাকে ডেলটা হাসপাতালে নিয়ে আসতে হলো? আমি তো ওকে ভালো দেখে গেলাম। কি এমন ঘটলো যে এত দ্রুত ওকে সরাতে হলো।’

আহমদ মেডিকেল হাসপটাতালে ফিহা কেমন ছিলো, তা’ ওকে আর ব্যাখ্যা করার মানসিকতা আমার ছিলো না। ডাক্তারের সাথে পঁচিশ বছর ঘর করার পর ওর চোখে যদি ফিহার অবস্থা ভালো থেকে থাকে, তবে আমার তো বলার কিছু নেই।

আমি ওর এ মন্তব্যে আশ্চর্য হয়ে গেলাম, যেখানে ফিহা ঐ ঘরের অস্বাভাবিক গরমে পাগলের মতো আচরণ করা আরম্ভ করেছিলো, আমাকে আর ওর মাকে বার বার বলছিলো, ‘আমাকে এখান থেকে এখুনি সরাও, না হলে আমি মরে যাবো।’ সেখানে ফিহা কিভাবে ভালো ছিলো বলতে পারে একজন সুস্থ বুদ্ধির লোক?

ডেলটা হাসপাতালের ঐ কয়দিন বিব্বু প্রতি দিন সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসতো আর সারাটা সময় ফিহার পাশে বসে ওকে সঙ্গ দিতো। প্রতি রাতে উঠে উঠে ফিহার পাশে গিয়ে দেখতো ওর কোন কিছুর প্রয়োজন হয় কিনা। এ কয়দিন জামান সাহেব প্রায় সারাটা দিন আমাদের সাথে থাকতেন। ফিহার বন্ধুরা পালা করে আসতো বিকেলবেলা, থাকতো অনেক রাত পর্যন্ত।

ফিহা তখন টয়লেটে যেতে একা হাটতে পারতো না। আমি ওকে ধরে নিয়ে যেতাম। এ সময় থেকেই ও আমার ওপর খুব বেশী নির্ভর করতে থাকে।১২ মার্চ সকালে ফিহাকে নিয়ে ডেলটা হাসপাতালে ভর্তি হলাম।

ওকে ভর্তি করেই ওখানকার ডাক্তাররা সাথে সাথে ওকে আবার রেডিয়েশন দেওয়া আরম্ভ করলেন। আরও গাদা গাদা ওষুধ আর ইনজেকশন দেওয়া আরম্ভ করলেন। এসির ঠাণ্ডার কারণেই হোক আর ঐ সব ওষুধ দেওয়াার কারণেই হোক ফিহা কিছুটা শান- হয়ে এলো।

টানা বিশ দিন ডেলটা হাসপাতালে থেকে ফিহাকে রেডিয়েশন আর নানা ওষুধ দেয়া হলো।

২৪ মার্চ ওরা বললো আমাদের কাজ শেষ আপনারা ওকে নিয়ে যান। ওর প্রফেসরের সাথে কথা বলেন।

আমি আর প্রফেসর পারভিনের কাছে যেতে চাইলাম না। পপিরও সেই অভিমত।

এদিকে বড় ভাই বলে রেখেছিলেন, ওর ওখানে ফিহাকে নিয়ে যেতে। ‘শেওড়াপাড়ায় একা একা থাকলে তোদের কষ্ট হবে। আমাদের এখানে একসাথে থাকলে ফিহার ভাল লাগবে। তোরাও একটু আরাম পাবি।’

রাজি হওয়া ছাড়া আর গত্যন-র ছিলো না। পপির মনে অবস’া অত্যন- খারাপ। এমন অবস’ায় আমরা দুইজন ফিহার মতো রোগীকে নিয়ে আমাদের শেওড়াপাড়ার ঐ নির্বান্ধব বাড়িতে কেমন করে থাকবো, ভাবতেই আমার বুক শুকিয়ে আসছিলো।

৩৮

ফিহার তখন আর হাঁটা দুরে থাক, বসে থাকারও শক্তি নেই। টয়লেট পেলে ও আমাকে ডাক দেয়, ‘আব্বু, টয়লেটে যাবো।’ আমি গিয়ে ওকে ধরলে ও কোন রকমে উঠে বসে, তারপর আমার শরীরের ওপর ভর দিয়ে কোন রকমে দাঁড়ায়। তারপর আমার শরীরে ভর দিয়ে একটু টলতে টলতে হেঁটে টয়লেটে যায়। আবার একইভাবে বিছানায় ফিরে আসে।

এম্বুলেন্সে করে ওকে উত্তরাতে বড়ভাইয়ের বাসায় নিয়ে এলাম। বাড়ি ছোট বউ নাবিলা ওর ঘর ছেড়ে দিলো। ওখানে ওদের বিছানাতেই ফিহাকে শুইয়ে দেওয়া হলো। বেশ বড় ঘর, গরমও বেশী না।

বড় ভাই, ভাবী, বড় পুত্রবধু মার্সিয়া, ওদেও দুই ছেলে, নাবিলা আর ওর ছোট্ট মেয়েটা সবাই ফিহাকে প্রায় ঘিরে থাকে। ওদের কাজের মেয়েটা একটুক্ষণ পরপরই উঁকি দিয়ে দেখে যায় ফিহাকে।

ফ্রেব্রুয়ারীতে আমার দুটো বই বের হওয়ার কথা ছিলো। একটা ঠিক একুশে ফেব্রুয়ারীতেই বের হলো। অন্যটা চার রঙে ছাপা হবে ্বলে একটু জটিলতা ছিলো। হঠাৎ আমার মনে হলো আমি মনে হয় আর বেশী সময় পাবো না। মনে হতেই প্রকাশক মিজানুর রহমান পাটোয়ারীকে ফোন করলাম, বললাম, ‘আমার ছেলে খুবই অসুস’। ওকে আমি এই বইটা উৎসর্গ করতে চাই। শিগ্রিই বইটা বের করার ব্যবস’া করেন।’

প্রকাশক সাহেব আমার কথা রাখলেন। বইটা তাড়াতাড়ি ছেপে এপ্রিলের তিন তারিখে বইটা উত্তরায় পাঠিয়ে দিলেন। আমি প্যাকেটটা খুলে প্রথম বইটা নিয়ে ফিহার ঘরে গিয়ে ওর হাতে দিলাম। বললাম, ‘বাবা এ বইটা আমি তোমাকে উৎসর্গ করেছি।’

ও বইটা হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নেড়েচেড়ে দেখলো। উৎসর্গের পাতায় আমি ওর নামের সাথে ওর চৌদ্দজন অসাধারণ বন্ধুদের নামও জুড়ে দিয়েছিলাম। ও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লো সে নামগুলো।

আর কোন কথা বললো না। আমার মনে হলো সারা জীবনের এটাই সবচেয়ে বড় কাজ করতে পারলাম ফিহার জন্যে। তখনও আমি জানি না ও আর মাত্র পাঁচ দিন আছে।

অধিকাংশ সময় ফিহা চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। মাঝে মাঝে চোখ বড় বড় করে এদিক ওদিক তাকায়, আবার চোখ বন্ধ করে থাকে। ক্ষতস’ানের ব্যাথাটা সব সময়েই আছে। মাঝে মাঝে অস্ফুট কণ্ঠে যেন ও কি বলে।

সাবধানে কাছে গিয়ে শুনি ও কখনও বলছে, ‘আল্লাহ, ব্যাথাটা একটু কমিয়ে দাও।’ কখনও বলছে, ‘আমাকে একটু ঘুম দাও, আল্লাহ।’ আবার কখনও বলছে, ‘আর যে পারি না আল্লাহ।’

আমার চোখ ভিজে ওঠে। নিজেকে জীবনে এতো অসহায় মনে হয়নি আমার। আমার একমাত্র সন-ান বিছানায় শুয়ে কাতর কণ্ঠে ঈশ্বরকে ডাকছে তার কষ্ট লাঘব করে দেওয়ার জন্যে। পিতা হয়ে আমি অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছি, কিছু করতে পারছি না, কিছুই না।

ওর কাঁধের কাছটা ধীরে ধীরে আরও বেশী ফুলে উঠতে লাগলো। সেই সাথে জায়গাটা গরম বেশ হয়ে উঠতে থাকলো। এক সময় হাত দিয়ে দেখি ওর বাম পাঁজরের কাছটায় বেশ ফোলা, চাপ দিলে বসে যাচ্ছে। সম্ভবত প্রস্রাব পরিষ্কার হচ্ছিল না, এ জন্য।

অধিকাংশ সময় ও ঝিমিয়ে থাকে। কখন ও ঘুমায়, কখন জেগে থাকে, অথচ চোখ বন্ধ করে আছে বোঝা যায় না। খুব একটা কথা বলে না। খাওয়ার সময় হলে তাকিয়ে নিতান- অনিচ্ছার সাথে অল্প একটু খাবার খায়।

এই সময় শোনা গেল ফিহা নাকি ভার্সিটিতে গিয়ে খুব বেশী হাঁটাহাঁটি দৌড়াদৌড়ি করেছে এ জন্যেই ওর রোগের এরকম খারাপ অবস’া হয়েছে। কথাটা আত্মীয়-স্বজনের অনেকের মাধ্যমেই আমার কানে এলো। ফিহার কানেও গেল কথাটা।

একদিন সন্ধ্যায় পপি যখন ওকে খাওয়াতে গেছে। ফিহা হঠাৎ বলে উঠলো, ‘বিশ্বাস করো মা, আমি ভার্সিটিতে মোটেই দৌড়াদৌড়ি করিনি। বাসা থেকে বেরিয়ে রিক্সা নিয়ে বড় রাস-ায় গিয়ে সিএনজি নিতাম। ওখানে বন্ধুরা আমাকে বেশি হাঁটতেও দিতো না, মা। এবার ভালো হয়ে গেলে দেখো আমি আর বাইরে কোথাও যাবো না, সত্যি বলছি, শুধু বিছানায় শুয়ে থাকবো আর টিভি দেখবো মা, আর একটুও হাটাহাটি করবো না।’

ফিহার এই আর্তকণ্ঠ আমার হৃদয়ে শেলের মতো করে বিঁধলো। এ ধরনের কুৎসা রটনাকারীরা কতোটা হৃদয়হীন পাষাণ হতে পারে যে, একজন মৃত্যুপথযাত্রী রোগীর সামনে অকারণ মিথ্যাচার করে রোগীর নিদারুণ মানসিক কষ্টের কারণ হতে পারে। এদেরকেই কি স্যাডিস্ট মনোবৃত্তির মানুষ বলে? আর যদি মনেও করি ওখানে ও দৌড়াদৌড়ি করেছে (তখন ওর যে শরীরের অবস’া তাতে সেটা মোটেই সম্ভব না), তাহলেও কি ওকে ওর এই শেষ সময়ে এ সব কথা তুলে ওর মনে কষ্ট দেওয়া ঠিক ছিলো? যারা এ সব মিথ্যা কথা রটিয়েছে, তারা তো জানতো যে ফিহা আর বেশি দিন বাঁচবে না, তারপরও এমনভাবে আঘাত দেওয়ার অর্থ কি?

তবে ওষুধ খাওয়ার ব্যাপারে ও অত্যন- সচেতন। ওকে কোন ওষুধ দিতে গেলেই জিজ্ঞেস করে, ‘এটা কি দিচ্ছো? কোন ওষুধ এটা।’

যখন তাকায়, তখন চোখ দুটো বড় বড় করে এদিক ওদিক তাকায়, যেন কাউকে খোঁজে। জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর দেয় না।

সন্ধ্যায় অথবা রাতে মাঝে মাঝে বলে, ‘একটু হাঁটবো আব্বু।’

আমি পরম স্নেহে ওকে ধরে এটু হাঁটাই। জিজ্ঞেস করি, ‘বারান্দায় যাবি?’

ও অসম্মতি জানায়।

আমি বুঝতে পারি ও নিজের শক্তি পরীক্ষা করে দেখতে চাইছে। কিন্তু দুই বার ঘরের এধার ওধার করার পর বিছানায় শুলে ও বেশ অস্থির বোধ করতো। খুব কষ্ট বোধ করতো এইটুকু হাঁটাতেই।

ঐ দুই দিন দু্‌ই বার হাঁটা পর ও মনে হয় বুঝে গেল ও হেরে যাচ্ছে, ও আর রোগের সাথে যুদ্ধ করতে পারছে না। তাই ওর ঘনিষ্ট বন্ধু পারভেজ যখন ওর সাথে দেখা করতে এলো। তখন অত্যন্ত অসহায়ভাবে ওকে বললো, ‘আমার শরীর খুব খারাপরে পারভেজ, খুব খারাপ।’

এক দিন হঠাৎ ওর মাকে বললো, ‘মা জানো, চোখ বন্ধ করলেই দু’জন কালো কাপড় পরা লোক দেখতে পাই। আমার কাছে আসে। তাকালেই আর দেখতে পাই না।’

ওর মা জিজ্ঞেস করলো, ‘ওদের মুখ দেখতে পাও?’

ফিহা মাথা নেড়ে বলেছিলো, ‘না। ওদের দুজনেরই মুখ ঢাকা।’

তিন তারিখ রাতে ওর মা যখন ওষুধ খাওয়ানোর জন্য ট্যাবলেটগুলো নিয়ে ওর কাছে গেল, তখন দশ মাসের মধ্যে এই প্রথম ওষুধ খাওয়া নিয়ে ও বিরক্তি প্রকাশ করলো, ‘আর কত ওষুধ খাওয়াবে। আর তো পাঁচ দিন আছি।’

মাঝ রাতে যখন ও আমাকে টয়লেটে যাবার জন্যে ডাক দিলো, আমি সারা রাতই সচেতন থাকতাম কখন ডাকে। তাড়াতাড়ি উঠে ওকে ধরলাম। ও আমার সাথে সাথে টলোমলো পায়ে টয়লেটের দিকে যেতে যেতে হঠাৎ বললো, ‘আবার আমাকে হাসপাতালে যেতে হবে।’

প্রফেসর ফিহার অবস্থা আমার কাছে শুনে মরফিন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। ফিহা যে ওষুধ খাচ্ছিল তাতে ওর ব্যাথা চব্বিশ ঘন্টায় একবার তীব্র হতো। তখন ওষুধ দিলে ধীরে ধীরে ব্যাথাটা কমে আসতো।

যখন প্রসেফর ওকে মরফিন ট্যাবলেট খেতে বললো, তখন আমার খুব ভাল লাগেনি। ওকে মরফিন খাওয়ানোর ইচ্ছে আমার ছিলো না। কিন্তু তরিক নিজে মরফিন কিনে দিলো। আর নিয়ম করে খেতে বললো।

পপি এক দিন পরে আমাকে বললো, ‘জানো। মরফিন না দিলেই বরং ফিহা ভাল থাকে।’

আমি ফোন করে কথাটা তরিককে জানালাম। বললাম, ‘মরফিন না দিলে হয় না? অন্য ওষুধ খেলেই তো ওর ব্যাথাটা কম থাকে।’

তরিক বললো, ‘না, মরফিন নিয়ম করে দেন।’

তিন তারিখে হেনা আপা ফোন করে ফিহার অবস্থা জানতে চাইলেন। আমার সব কথা শুনে বললেন, ‘ওকে এখন অক্সিজেনের সাপোর্ট দিতে হবে।’

কথাটা তরিকের কাছে বলতে তরিক বললো, ‘পাড়ার নার্সিং হোমের এসি কেবিনেও রাখা যায়, কিন্তু ওখানে তো আমি সব সময় ওর কাছে থাকতে পারবো না, তাই ঢাকা মেডিকেলেই ভর্তি করি। এখন এসি কেবিন খালি নেই। একদিন পরেই পাওয়া যাবে। একদিন একটু কষ্ট হবে। আমি তো আছিই, সব ব্যবস্থা করে দেবো।’

ডাক্তার তরিক এপ্রিলের চার তারিখে উত্তরার বড় ভাইয়ের বাসা থেকে আবার এম্বুলেন্সে করে ফিহাকে নিয়ে সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বড় একটা কেবিনে এনে তুললো।

সিঙ্গল কেবিন হলেও কথা ছিলো। ঢুকে দেখি ওটা একটা শেয়ার্ড কেবিন। ভিতরে দিকে আর এক রোগী সঙ্গে তার আধা ডজন সহযোগী। ফিহার বেডটাও কেমন নড়বড়ে। ফিহা ডেলটার কেবিনে যে আরামে ছিলো, এটা তার শতভাগও না। ও কোন প্রতিবাদ করলো না, কোন মন-ব্য বা মত প্রকাশও করলো না। শুধু আচ্ছন্নের মতো পড়ে থাকলো।

ডাক্তার তরিক বলেছিলো, ‘পাড়ার নার্সিং হোমের এসি কেবিনেও রাখা যায়, কিন’ ওখানে তো আমি সব সময় ওর কাছে থাকতে পারবো না, তাই ঢাকা মেডিকেলেই ভর্তি করি। এখন এসি কেবিন খালি নেই। এক দিন পরেই পাওয়া যাবে। একদিন একটু কষ্ট হবে। আমি তো আছিই।’

আমার মনে সায় দেয়নি কথাটা। কিন’ ও ডাক্তার, আমার চেয়ে ফিহার অসুখটাকে ও আরও ভালভাবে জানে। প্রতিবাদ করবো তাতেও মনে সায় দেয় না।

প্রাইভেট হাসপাতাল না, এখানকার সবাই তাদের মন মতো চলবে, আমাদের অনুরোধ শুনবে না। যা’ হোক, একজন ওয়ার্ড বয় এসে ফিহার নাকে অক্সিজেন নল লাগিয়ে দিলো। সিস্টার এসে হাতে স্যালাইনের নলও ফুটিয়ে দিলো। আর কোন খবর নেই কারো।

নড়বড়ে বেডের কারণে হঠাৎ ভয়াবহ শব্দ করে অক্সিজেন সিলিন্ডারটা মেঝেতে পড়ে গেল আর সেই শব্দে ফিহা একেবারে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে উঠলো।

আমি তাড়াতাড়ি করে ওর কাছে গিয়ে একটু সান-্বনা দিয়ে শান- করলাম। ওয়ার্ড বয় আবার এসে সিলিন্ডারটা ঠিকভাবে বসিয়ে গজ-ব্যান্ডেজ এসে বিছানার সাথে শক্ত করে বেঁধে দিলো। এখনে আসার পর টের পেলাম ঘরটা প্রচণ্ড গরম, একেবারে আহমেদ মেডিকেলে যে রকম গরম ছিলো সেরকম।

সন্ধ্যার পরে ঘরটা একেবারে অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়ে উঠলো। ফ্যানের রেগুলেটর সবচেয়ে বাড়িয়ে দিয়েও যেন মনে হচ্ছে ওটা চলছেই না। ফিহার সাথে একটা হাত পাখা সব সময়েই থাকতো। ওর ক্ষতস’ানে ব্যাথা করলে বা জায়গাটা গরম হয়ে উঠলে আমরা হাত পাখা নেড়ে আরাম দেওয়ার চেষ্টা করতাম। এখন আমি আর পপি পালা করে ঐ পাখাটাও নাড়তে থাকলাম।

ঘরের আবহাওয়া দেখে আমি আতঙ্কিত হয়ে নানা দিকে ফোন করে খোঁজ নিতে থাকলাম কোন টেবিল ফ্যান পাওয়া যায় কি না।

সোনালিকে ফোন করে ফ্যানের কথা বলতে ও বললো, ‘আমার ড্রাইভার তো চলে গিয়েছে, কিভাবে পৌঁছাই ফ্যানটা।’

একবার মনে হলো বলি, ‘তুমিই না হয় কষ্ট করে পৌঁছে দাও। তোমার ছেলে তো ড্রাইভিং জানে। ফিহা তো তোমার ভাই।’

তা আর বললাম না।

শেষে বন্ধু কবি বিমল গুহ বললো ওদের একটা টেবিল ফ্যান আছে।

আমি তখনই একটা রিক্সা নিয়ে হাসপাতালের কাছে ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে হাজির হলাম। গিয়ে দেখি বিমল গুহ লুঙ্গি পরে খালি গায়ে নিজেই টেবিল ফ্যানটা পরিষ্কার করছে।

আমি ওর স্ত্রীকে ফিহার অবস্থা খুলে বলতে ভদ্রমহিলা কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘দাদা। আমরা সারা রাত জেগে থাকবো, যদি কোন প্রয়োজন হয় শুধু ফোন করবেন, আমরা চলে আসবো। ও তো আমারও বাবা, ওর জন্য করবো না?’

আমি টেবিল ফ্যানটা নিয়ে এসে ফিহার প্রায় মাথার কাছে ওটাকে বসিয়ে ফ্যানটা চালিয়ে দিলাম। সিলিং ফ্যান আর টেবিল ফ্যানের যৌথ বাতাসে ফিহা একটু স্বস্তি পেলো।

ও বহুক্ষণ টয়লেট করছে না, অনেক পরে ও বললো, ‘আব্বু টয়লেটে যাবো।’

আমি সাবধানে ওকে তুলে অক্সিজেন আর স্যালাইনের নলদুটো খুলে ওকে ধরে টয়লেটে নিয়ে গেলাম। কমোটে বসিয়ে বাইরে এসে দাড়িয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ এক সময় বললো, ‘আসো। হলো না।’

এটা নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তা হতে থাকে আমার।

মাঝ রাতের দিকে ও বললো, ‘তা করবো।’

অতো দুঃখের মধ্যেও ওর ঐ পুরানো কথা শুনে হাসি এলো।

আমি আর ওকে টয়লেটে না নিয়ে বিছানার পাশে দাঁড় করিয়ে ইউরিনালটা ধরলাম। বেশ একটুক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটু প্রশ্রাব হলো।

ওকে শুইয়ে দিয়ে টয়লেটে ইউরিনালটা খালি করতে গিয়ে দেখি ওর প্রশ্রাব আবার লাল হয়ে উঠেছে। আমি বুঝতে পারলাম প্রচণ্ড গরমে ওর শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দিচ্ছে। পপিকে সে বললাম ওকে একটু ঘন ঘন পানি খাওয়াতে।

এক সময় খেয়াল করলাম দুপুরের পর থেকে ও একবারও প্রস্রাব করেনি।

মাঝ রাত পর্যন- ওর পাশে জেগে বাতাস করে ওকে আরাম দেওয়ার চেষ্টা করলাম। এক সময় একটু ক্লান- বোধ করায় নিচে পাটি পতে শুয়ে পড়লাম।

পপি বললো, ‘তুমি একটু শোও। আমিও শোব একটু পরে।’

কখন একটু ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না। অস্বসি’তে ঘুম ভেঙে তাকিয়ে দেখি পপি কেমন উন্মাদের মতো আচরণ করছে।

আমি উঠে ওকে গিয়ে ধরলাম, জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে?’

ও কোন কথা না বলে কেবল অপ্রকৃতসে’র মতো খালি ফোঁপাতে থাকলো। ওকে ধরে তুলে টয়লেটে নিয়ে গিয়ে শাওয়ারটা সম্পূর্ণ খুলে তার নীচে দাঁড় করিয়ে দিলাম। একটুক্ষণ পর পর ঘরে এসে ফিহার দিকে তাকিয়ে দেখি ও কেমন আছে দেখার জন্যে।

প্রায় পনেরো মিনিট ভেজার পর পপি একটু স্বাভাবিক হলো। তখন বললো, ‘আর একটু হলে আমি পাগল হয়ে যেতাম। ফিহা মরে যাবে এমন জায়গায় থাকলে।’

আমি ওকে বললাম, ‘আমি কথা দিচ্ছি কাল সকালে আমার প্রথম কাজ হবে ফিহাকে এখান থেকে সরানো। দরকার হলে ওকে রাস-ায় শুইয়ে রাখবো, তবু এই দোজখে আর না। সকাল হতে দাও, প্লিজ।’

আমি ওকে বললাম, ফিহার গা ভেজা কাপড় দিয়ে মাঝে মাঝে মুছিয়ে দিতে, যদি একটু আরাম পায়।’

সকালে শুনি ঐ দিনও এসি কেবিন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ডাক্তার তরিক নাকি চেষ্টা করছে সিঙ্গল কেবিনের জন্যে। অথচ অন্য কোন হাসপাতালে নেওয়ার কোন চিন-া-ভাবনাই নেই ওর।

একবার মনে হলো বলি, ‘তোমার সন-ান হলে এই মুহূর্তে তুমি কি করতে? অন-তঃ জিজ্ঞেস তো করতে পারতে মামা, ওখানে নিলে এতো টাকা লাগবে। আছে আপনার কাছে?’ তোমার পকেট থেকে তো টাকা খরচ হতো না। আমি তো একবারের জন্যেও তাদের কাছে ফিহার চিকিৎসার জন্যে টাকা চাইনি। বরং সোনালী মিটিং ডেকে সবার সামনে ‘আমি কেমোথেরাপির টাকা দেবো’ বললেও মাত্র দুটো কেমোর সাত হাজার টাকা আর শেষ বার ল্যাব এইডের কেবিন খরচ বাবদ দশ হাজার টাকা- এই তো সাকুল্যে সতেরো হাজার টাকা আমার ছেলের পিছনে খরচ করেছে। ঐ সতেরো হাজার টাকা তো আমি দিতে পারতাম।

আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেল। আমি তখনই ডেলটা হাসপাতালে যোগাযোগ করলাম। ওদেরকে বললাম, ‘সায়েম মাহমুদ আপনাদের রেজিস্টার্ড রোগী। ওর এখন খুবই খারাপ অবস’া। আমরা ওকে একটু আরামে রাখতে চাই। একটা এসি কেবিনের ব্যাবস’া করে দেন প্লিজ।’

ওরা বললো, ‘ওর প্রফেসরের রেফারেন্স ছাড়া আমাদের ভর্তি করতে তো অসুবিধা আছে। প্রফেসরের রেফারেন্স নিয়ে আসেন।’

আমি বললাম, ‘প্রফেসরকে আমি এখন কোথায় পাবো। আমি এখনই ওকে হাসপাতালে আনতে চাচ্ছি। ও এখন ঢাকা মেডিকেলে আছে। কিন’ এখানে ও কোন রকম কেয়ার পাচ্ছে না। আমরা ওকে একটু আরাম দিতে চাই। ওর বর্তমান অবস’া সম্পর্কে আমি ভালভাবে জেনেই আপনাদের সহায়তা চাচ্ছি।’

ওরা তখন বললো, ‘ঠিক আছে নিয়ে আসেন।’

আমি, বললাম, তা’হলে আপনারা অক্সিজেন ফ্যাসিলিটিসহ এম্বুলেন্স পাঠান। আমি খরচ দিয়ে দেবো।’

ফিহার কাছে এসে দেখি সোনালী বসে আছে ফিহার পাশে। আমি ঘরে ঢুকেই পপিকে বললাম, এখনই তৈরী হয়ে নাও। আমি ফিহাকে ডেলটায় নিয়ে যাবো।’

সোনালী বললো, ‘সিঙ্গল কেবিনের ব্যবস’া তো হয়েছে।’

আমার ফুসফুসে সে যত শক্তি ছিলো তাই দিয়ে চিৎকার করতে উঠতে ইচ্ছো হচ্ছিলো। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করালাম। শান- গলায় বললাম, ‘আর এক মুহূর্তও ঢাকা মেডিকেলে ফিহাকে রাখছি না আমি।’

একটু পরেই এম্বুলেন্স এসে গেল। আমার ভাগনা বিব্বু, ফিহার দুই-তিনজন বন্ধু ওরাও হাজির হয়ে গেল। ওদেও সহায়তায় ফিহাকে নিয়ে ডেলটা হাসপাতালে ফিহাকে নিয়ে এলাম।

Leave a Reply