আরও এক সপ্তাহ পার হলো। ফিহার কাঁধ আর ঘাড়ের পিছনের তীব্র ব্যাথাটা আরও অসহনীয় হয়ে উঠেছে। ফোলাটাও যেন একটু বেড়েছে। জায়গাটা গরম বোধটা ক্রমে যেন বেড়েই যাচ্ছে।
এর মধ্যে তরিকের নির্দেশে রক্ত পরীক্ষা আর কি একটা এফএনএসি পরীক্ষা করতে হলো। এফএনএসি হলো ফাইন নিডল এসপিরেশন সাইটোলজী পরীক্ষা। এটা একটা বিশেষ ধরণের পরীক্ষা। আমি আমার চাকরী জীবনের বড় অংশ বারডেম হাসপাতালে কাটিয়েছি। প্রকাশনা আর ছাপার কাজে আমার দীর্ঘ। বারডেমের প্রায় সকল ডাক্তারের গবেষণাপত্র তৈরী করে দেয়া, পাওয়ার পয়েন্টে লেকচার তৈরী করে দেওয়ায় আমার জুড়ি কেউ ছিল না। শুধু বারডেমই না, পিজি হাসপাতাল, চক্ষু হাসপাতাল আর আরও কত প্রতিষ্ঠানের যে আমি কাজ করতাম তার হিসেব নেই। আমার মনে পড়ে গেল এ পরীক্ষা সাধারণত ক্যানসারের ক্ষেত্রে করা হয়। আমি কাউকে কিছ বললাম না, বিশেষ করে পপিকে তো না-ই, আমার বুকের ভিতর দিয়ে কেমন যেন একটা ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেল।
পরে একদিন, যখন কেমোথেরাপী চলছে, তখন ফিহা আমাকে বলেছিলো,
‘জানো আব্বু, এফএনএসি রিপোর্টে কি পাওয়া গেল কেউ আমাকে কিছু বললো না। আমি পরের শুক্রবারে রিপোর্টটা দেখাতে আর দুলাভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার জন্য গেলাম। শুনলাম অপারেশন করতে হবে। জুম্মার নামাজে যাওয়ার সময় আমি আমার এক বছরের ছোট ভাগ্নে আর বন্ধু হাফ ডাক্তার আশিককে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমার এটা আসলে কি হয়েছে? ও বললো, ‘ভয়ের তেমন কিছু নেই, একটু জটিলতা আছে, ছোট একটা অপারেশন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’ মনের মধ্যে একটা ধাক্কা লাগলো। আমরা যে সমাজে বাস করি, মানে এই নিম্নমধ্যবিত্ত সমাজে অস্ত্রোপচারের ব্যাপারটা এমনিতেই একটু ভয়ের। বছরখানেক আগে তোমাকে দেড় মাসের মধ্যে তিনবার অপারেশন টেবিলে হাজির হতে হয়েছিল। হাসপাতালে থাকাটাই কেমন একটা অস্বসি-কর, তার পরে অপারেশন তো আরও ভয়ের। তবু মনে মনে সাহস আনতে চেষ্টা করলাম। মনে আছে আব্বু, এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় আপারেশন?’
সে ঘটনা কি ভুলে থাকার? প্রতি মুহূর্ত মনে পড়ে।
তখন ওর বয়স বছর দশেক হবে। সমবয়স্ক ছেলেদের পুরুষাঙ্গের সাথে ওর তেমন পরিচিতি থাকার কথা নয়, তাই ওরটা যে কিছুটা ব্যতিক্রম, তা ও কিভাবে জানবে? আমি জানতাম একটু বড় হওয়ার পর থেকেই, যখন ও নেংটা থাকতে খুব অস্বসি- বোধ করতো না। ওর যৌনাঙ্গের দুটি বিচির একটা পাওয়া যেত আর একটা নেই। আর একটু বড় হতে আমি ওকে বরডেমে নিয়ে আমার একজন এন্ডাক্রিনোলজিস্ট বন্ধুর কাছে নিয়ে গেলাম। আগেই ওর সাথে এ নিয়ে কথা বলে রেখেছিলাম। ও বলেছিলো ওর কাছে নিয়ে আসার জন্যে। ডাক্তার ওকে একটা ছোট ঘরে নিয়ে গেলেন। আমাকেও ভিতরে যেতে দিলেন না। বেশ কয়েকটা পরীক্ষাও করতে দিলেন।
সে সময়ে অনেকদিন নিয়মিত ওকে একটা ওষুধ খেতে হলো। আগে তো বিচিটা বোঝাই যেতো না, পরে ধীরে ধীরে দেখি তলপেটের বেশ নিচে যৌনঙ্গের উপরের চামড়াটা একটু ফুলে উঠেছে। আমার ডাক্তার বন্ধু হেসে বললেন, ‘আপনার পোলার দুটো জিনিষই ঠিক মতো আছে। আমি ভেবেছিলাম বুঝি একটা একেবারে তৈরীই হয়নি। এটা খুব ভাল লক্ষণ।’
আরও কিছুদিন পর ফিহাকে আমার অফিসে নিয়ে গেলে আমার সেই বন্ধু দেখেশুনে বললেন, ‘আর ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই। এখন একটুখানি চিরে দিয়ে বিচিটা বের করে নামিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।’
ওর পরামর্শ মতো একদিন পপি ফিহাকে ওর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলো। ছোটবেলা থেকেই ও একটু শক্ত কিসিমের ছেলে তাই অপারেশন থিয়েটারে যখন ওকে একা নিয়ে গেল তখন তেমন ভয় পায়নি। নানা রকম পরীার পর অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গিয়ে ওকে যখন ওটি টেবিলে শুইয়ে দিয়েছিলো তখনও ও কোন আপত্তি করেনি। অত্যন- স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছিলো ব্যাপারটা। জীবনের সব বিষয়ই ও অত্যন- স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে গ্রহণ করতো ও। কোন কিছুই ওকে তেমন বেশী প্রভাবিত করতে পারতো না।
বেশ অনেক দিন ব্যাথা, ক্ষত আর দুর্ভোগ নিয়ে দিন কাটাতে হয়েছিল ওকে। ক্ষতে আমি এন্টিবায়োটিক ক্রীম লাগিয়ে দিতাম। অনেক পরে আমি ওকে কথায় কথায় বলেছিলাম সকলের পুরুষাঙ্গের সাথের বিচিদুটো স্বাভাবিকভাবে নীচে ঝুলে থাকলেও ওর দুটি বিচির মধ্যে একটা পেটের মধ্যে ঢুকে বসেছিল। অপারেশন করে সেটা স্বাভাবিক জায়গায় প্রতিস’াপন করা হয়েছিল সেই অপারেশনে।
১৬
ফিহার ঘরে একটু ছোট্ট ডায়রী পেয়েছিলাম আমি। তাতে গুটি গুটি অরে অনেক অসংলগ্ন লেখা। এটা ঠিক তারিখ দেয়া নিয়মিত দিনলিপি না, ওর মনের কথাগুলো মাঝে মাঝে ও লিখতো। ও কবিতা লিখতো যখন স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে কলেজে ঢুকেছে, এ সময়ে। আমি জানতাম না ও চুপি চুপি কবিতা লিখতো, গল্পও লিখেছিলো। আর লেখা আছে টুকরো টুকরো ওর অভিজ্ঞতার কথা।
ওর লেখা কবিতাগুলো, বোঝাই যায়, এইচএসসি পড়ার সময় লেখা, তাই অনভিজ্ঞতার ছাপ তো থাকবেই। একটা কবিতা পড়ে মনে একটু ধাক্কা খেলাম। কবিতার মাধ্যমে আসলে কী বলতে চেয়েছিলো ও?
একটু একটু করে পর হয়ে যাচ্ছি আমি / শুধু ততটাই করছি আমি / যতটুকু আমার জন্যে / পরের জন্যে করা বোধ হয় / ভুলে যাচ্ছি আমি / একটু একটু করে একা হয়ে যাচ্ছি আমি / সাথিরা হচ্ছে সব পথছাড়া / সবাইকে হারিয়ে একেবারে / শিহরিত এই আমি / হয়ে যাচ্ছি এক অতিথি ফুল / একটু একটু করে।
আর একটা কবিতাও যে খুব আনাড়িপনায় লেখা, তা বলা যাবে না-
আমার কবিতা খুব পছন্দের হয় / যখন আমার লেখা / কষ্টগুলো ভেঙে ফেলতে চায় / যদিও তা অবিনশ্বর কষ্টটাই কেবল সাথি হয়/ পছন্দ করা কবিতাগুলোর।
কবিতাগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছে ও যদি চর্চ্চা করতো বা চর্চ্চা করার সময় পেতো তা’ চলে ও ওর দাদা বা দাদীর মতো কিংবা নেহায়েত আমার চেয়ে ভালো কবিতা লিখতে পারতো। হয়তো যেখাবে ও ওর ডায়রির পাতা ভরে দিয়েছিলো. তেমন করে সাহিত্যও, গল্প বা উপন্যাস যে ওর হাত দিয়ে রেব হতো না তা কে বলতে পারে?
১৭
তিন দিনের মধ্যেই ফিহার অপারেশনের তারিখ ঠিক করা হলো। সোনালী ল্যাব এইডে ওর অপারেশনের তারিখ ঠিক করে ফেললো। পপি অফিস থেকে ছুটি নিলো। আমি ফিহাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনলাম। হেসে হেসে ওকে বললাম, ‘চিন-া করো না বাবা। চিন-ার কিছু নেই, দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।’
ওর ডিপার্টমেন্টে কি একটা জটিলতা ছিলো, সেটাও আমাকে সাথে নিয়ে গিয়ে ফিহা ওটা ঠিক করে এলো। বেশ কিছু দিন আগে ও ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এমবিএ কোর্সে ভর্তি হয়েছিলো। অপারেশন হলে তো এ সেমিস্টার ধরতে পারবে না। ওর মাথায় সে ব্যাপারটাও ছিলো। আমাকে বললো, ‘একটু ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে এই সেমিস্টার বাদ দেয়ার দরখাস- করতে হবে।’
ওকে নিয়ে মহাখালীতে গেলাম। এ বিল্ডিং ও বিল্ডিং ঘুরে দরখাস- জমা দিতে প্রায় বিকাল হয়ে গেল। একটু নিশ্চিন- হলাম, অন-তঃ ভর্তির টাকাটা মারা যাবে না। এবারের সেমিস্টার বাদ পড়লেও আগামীটা, মানে জানুয়ারীরটা ধরতে পারবে ও।
জুলাইয়ের ঊনত্রিশ তারিখে ফিহাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করে দিল সোনালী। মেলা দৌড়াদৌড়ি করে ওয়ার্ডের সবচেয়ে সুন্দর বেডও জোগাড় করে ফেললো। বিকালেই ওকে নিয়ে ঢুকিয়ে দিলো অপারেশন থিয়েটারে। আমি তখনও ভর্তির কাগজপত্র নিয়ে নীচে দৌড়াদৌড়ি করছি। আমার একমাত্র সন-ানের সাথে অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে এক নজর আর দেখা হলো না।
ফিহা পরে আমাকে বলেছিলো-
‘অপারেশন থিয়েটারের চারদিকে বহু রকম যন্ত্রপাতি ছড়ানো-ছিটানো, মনিটর, অক্সিজেন মাস্ক, আরও কত কি। একটা বেডে শুইয়ে দিয়ে কি একটা ইনজেকশন দিলো। নাকের উপর চেপে ধরলো একটা অক্সিজেন মাস্ক। অল্পক্ষণ পরেই চারদিক অন্ধকার হয়ে এলো। কতক্ষণ পরে বলতে পারবো না। একবার অল্পক্ষণের জন্য জ্ঞান ফিরলো থিয়েটারের মধ্যেই। কেমন যেন ভোঁতা ব্যাথা সারা শরীরে আর ঠাণ্ডায় সারা শরীর কাঁপছিল। কাউকে যে বলবো, আমার শীত করছে- সে কথাটা বলার আগেই আবার বিস্মৃতির অতলে ডুবে গেলাম। আবার যখন জ্ঞান ফিরলো। খুব শীত করছিল। গায়ের উপর যে পাতলা কম্বলটা দেয়া আছে তাতে শীত আটকাচ্ছে না। একজন নার্স ঝুঁকে জিজ্ঞেস করলো, ‘খিদে পেয়েছে?’ আমি ঘাড় নেড়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমাকে কি স্বাভাবিক খাবার দেয়া হবে?’ ও বললো, ‘হ্যা, আপনি যদি খেতে পারেন।’ আমি বললাম, ‘শুয়ে শুয়ে খেতে হবে?’ ও বললো, ‘না, বেডটা উঁচু করে দিচ্ছি।’ বলে একটা রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে বেডটা বেশ কিছুটা উঁচু করে দিয়ে বললো, ‘আমি খাইয়ে দিচ্ছি। অসুবিধা নেই।’ একটা সবজির তরকারী দিয়ে একটু ভাত চামচ দিয়ে মাখিয়ে আমার মুখে তুলে ধরলো। তখন আমার মনে হলো আমি খেতে পারবো। মনে হলেও চার-পাঁচ লোকমার বেশী খেতে পারলাম না। নার্সটি পানি খাইয়ে দিয়ে বললো, ‘ঘুমিয়ে পড়েন।’ ‘জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঘুম কি এমনিতেই আসবে?’ নার্সটি বললো, ‘না আমরা কোন ঘুমের ওষুধ দেই না এখন। খালি পেইন কিলার দেয়া আছে, ব্যাথা টের পাবেন না। চেষ্টা করে ঘুমিয়ে পড়-ন।’ আমি চোখ বুঁজে ফেলেছিলাম।’
সার্জন বলেছিলো, অপারেশনে বড় জোর এক ঘন্টা লাগবে। ওটির সামনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েই আছি। ঘটির কাঁটা আর নড়ে না। এক ঘন্টা- দেড় ঘন্টা- দুই ঘন্টা করে সময় যায়, ওটির দরজা খোলেই না। আমার বুক ফেটে খালি কান্না আসে। আমার চোখ দিয়ে অশ্রু বেয়ে নামে।
সোনালী আমার চোখের পানি দেখে একটা ধমক দিয়ে বলেছিলো, ‘এখন চোখের পানি ফেলে কি হবে?’
ওর কথা শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। ও আসলে কী বলতে চায়? ফিহার এই অসুস’তার জন্যে কি আমরা দায়ী? আমরা ওর বাবা-মা, ওর জন্মের পর থেকে এই পঁচিশটা বছর আমাদেরই তত্ত্বাবধানে আমাদেরই সংসারে ও এতো বড় হয়েছে। আমাদের অব্যবস’াপনার জন্যেই কি ওর এই অসুস’তা, আমাদের গাফিলতির জন্যেই কি ওকে ডাক্তারের ছুরির তলায় যেতে হয়েছে! এ রকম ক্রানি-কালের ঐ সময় এমন কথা কেউ উচ্চারণ করে? আগেও এমন কথা ও প্রায়ই বলতো।
বলতো, ‘তোমরা ফিহার জন্যে কি করেছো? ফিহা তো নিজে নিজেই বড় হয়েছে। ও ড্রাগ এডিক্ট হতে পারতো, সন্ত্রাসী দলে জুড়ে যেতে পারতো, হয়নি এতে তোমাদের কোন কৃতিত্ব নেই, হয়নি ওর নিজের গুণে।’
একদিন তো ও বলেই বসলো, ‘ফিহাকে যদি এখন বলি তুই বাপ-মাকে ছেড়ে আমার এখানে চলে আয়, ও সাথে সাথে চলে আসবে।’
আমি চুপ করে থাকলাম। হয়তো কথাটা ঠিক। আমি তো আর আমার কিছু কিছু আত্মীয়-স্বজনের মতো অনিয়ন্ত্রিত অপরিমিত অর্থ উপার্জন করতে শিখিনি। আমার সে সুযোগ থাকলেও- সব জায়গাতেই ‘ঢেউ গুণে’ অন্যায় অর্থ উপার্জন করা যায়, আমি তা করিনি, অথবা বলতে হয় করার মানসিকতা তৈরী হয়নি। সবাইকে দিয়ে তো সব কাজ হয় না। হয়তো ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশী’ বলে যে কথাটা প্রচলিত আছে সোনালীর এ সব কথাগুলো সেটারই সার্থক রূপ বলেই আমার কাছে।
হয়তো ফিহার যতটা প্রয়োজন ছিলো আমরা দিতে পারিনি। ওর পিছনে অনিয়ন্ত্রিত অর্থ আমরা ব্যয় করতে পারিনি। প্রতিদিন ওর দুই গালে চুমা দেইনি কিংবা ওকে জড়িয়ে ধরিনি। তবু ও ঠিকই জানতো আমরা তাকে কতোটা ভালবাসতাম। আর তাই ইউনিভার্সিটিতে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে, ও ঠিকই বেলা দুটো নাগাদ উঠে চলে আসতো। বন্ধুরা কারণ জিজ্ঞেস করলে অকপটে বলতো, ‘আব্বু-আম্মুর সাথে দুপুরে ভাত খাবো। ওরা আমার জন্যে অপেক্ষা করবে।’
ক্লাস করতে করতে কিংবা লাইব্রেরীতে অথবা ফ্রেঞ্চ ক্লাসে ওর দেরী হলেই ও আমাকে ফোন করতো, বলতো ও কোথায় আছে, ফিরতে কতো দেরী হবে। আমরা ঠিকমতো খেয়েছি কি না। আমাদের দু’জনের প্রতি ওর আকর্ষণ আর মমত্ববোধ না থাকলে এমন আচরণ নিশ্চয়ই ও করতো না।
দুপুরে পপির অফিস থেকে ফিরতে দেরী হলে ফিহা সব সময় অপেক্ষা করতো কখন মা ফিরবে। অনেক সময় পপি বাসায় ফিরে খেতে বসতে বিকাল পাঁচটা বেজে যেতো, তখনও ফিহা ওর মা-র জন্যে অপেক্ষা করতো এক সাথে খাবে বলে। একে আমাদের প্রতি ওর গভীর ভালবাসা ছাড়া আর কি বলবো আমি?
সন-ানের জন্যে বাবা-মার যে প্রকৃত ভালবাসা তাদের রক্তের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেটা সন-ান ঠিকই অনুভব করতে পারে। তাকে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া লাগে না। ইউরোপ আমেরিকার লোকেরা ‘আই লাভ ইউ’ বলে প্রতিদিন মুখে উচ্চারণ করলেও সেটা যে কেবল মৌখিক, তার মদ্যে হৃদয়ের টান নেই, সেটা সন-ানরা জানে বলেই বাবা-মাকে ওল্ড হোমে ফেলে রাখে। আমা আব্বা বলতেন যে শব্দ মুখ থেকে নিঃসরিত হয় তা কানে গিয়ে শেষ হয়, যে শব্দ হৃদয়ে উচ্চারিত হয়,তা কানে শোনা না গেলেও হৃদয়ে তা ঠিকই গুঞ্জরিত হয়।
ও অসুস’ হওয়ার দু’ বছর আগে দেড় মাসের মধ্যে যখন আমার তিন বার অপারেশন হলো, সে সময়গুলোতে ফিহা যে কী দায়িত্বশীলতার সাথে গভীর মমতায় রাত জেগে আমার সেবা করেছিলো, তা’ একমাত্র আমিই জানি, আর আমার দেহের প্রবাহমান প্রতিটি রক্তকণা জানে। আমার জন্য ওর প্রতি মুহূর্তের উৎকণ্ঠা আমি অন-র দিয়ে অনুভব করেছি।