সায়েম মাহমুদের নিস্ফল দ্বৈরথ অধ্যায় ৪

মাত্র পঁচিশ বছরের মধ্যেই আমার সেই অসহায় নবজাতকটা যখন বড় হয়ে উঠে ওর চারপাশের সকল মানুষের প্রশংসা, ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার স্নেহ পেতে আরম্ভ করেছে, যখন ও সবাইকে ওর মেধা, ওর বিচণতা, ওর প্রজ্ঞা দেখিয়ে বিস্মিত ও বিমু” করতে আরম্ভ করেছে, যখন ও ওর সেবা-সহমর্মিতা আর সহযোগিতার মানসিকতা প্রয়োগ করতে আরম্ভ করেছে, যখন সবাই ওর উৎসর্জন, ওর পরিষেবা আর সমমর্মিতা পেতে আরম্ভ করে কৃতজ্ঞ আর ধন্য হতে আরম্ভ করেছে, ঠিক তখনই এই উজ্জ্বল সূর্যটার গ্রহণকাল আরম্ভ হলো।

ওর তখন অনার্সের রিট্‌ন পরীক্ষা শেষ হয়েছে। প্র্যাকটিক্যাল আর ভাইভা পরীক্ষা হয়নি। জীবনে কোনদিন যে ছেলে আমার কাছে একটা খেলনার জন্যে কিংবা একটা পোষাক বা জুতোর জন্যে আবদার করেনি, হঠাৎ বললো, ‘রংপুর আর রাজশাহী বেড়াতে যাবো।’

আমি সানন্দে রাজি হয়েছিলাম।

ওর তখন কাজকর্ম কিছুই নেই- পরীক্ষার পর ঘুম থেকে উঠতে বেলা ন’টা বাজিয়ে দেয়- এতটাই আলস্য ওর শরীরে জমেছে! আমি কিছু বলি না। কারণ অনার্স চলাকালীন ও পড়াশুনা নিয়ে, বিভিন্ন কোর্স করা নিয়ে অনেক রাত পর্যন- খাটতো। প্রচুর খাটতে পারতো ও। তাই এই আলস্যটাকে আমি বেশ একটু প্রশ্রয়ই দিতাম। জানতাম, মাস্টার্সে ভর্তি হলেই ও আবার ব্যতিব্যস- হয়ে উঠবে। এ আলস্য একেবারেই সাময়িক।

ন’টার দিকে ঘুম থেকে উঠে টয়লেট সেরে নাস-া খাওয়া, খবরের কাগজ পড়া, শুয়ে-বসে সময় পার করা, টিভি দেখা, দুটো নাগাদ গোছল করা। দুপুরের ভাত অধিকাংশ দিন খাওয়া হয় পপি অফিস থেকে ফেরার পর বিকাল চারটার দিকে। তারপর আবার ওর বিছানায় গড়াগড়ি করা, সন্ধ্যায় কিছু হাবিজাবি খাওয়া, সারা সন্ধ্যা টিভি দেখা কিংবা লোডশেডিং-এর কারণে অন্ধকার ঘরে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে আকাশ-পাতাল ভাবা আর রাতের খাবারের পর আবার বিছানায় ঘুমের কাছে আত্মসমর্পন করা। এটাই ছিল ওর দৈনন্দিন রুটিন।

বন্ধু-বান্ধবের সাথে যে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাবে তেমন সখ নেই ছিলো না ওর। একই পাড়ায় থাকে শাহজাদা, ফার্মগেটে নজমুল আর রামপুরায় মিজান- এরা সবাই ওর স্কুলের বন্ধু। কলেজের দুই বছরে তেমন কড়া ধরনের বন্ধু গড়ে ওঠেনি কারো সাথে। তবে সে বাবদে ভার্সিটিতে যাওয়ার পরই কেমন করে জানি না হঠাৎ করেই পনেরো জনের একটা দল তৈরী হয়ে গেল ওর।

এতটাই ঘনিষ্টতা যে হেন কোন বিষয় নেই ওদের মধ্যে আলোচনা হয় না- এমন কি বাড়িতে আমি ওকে কি বলতাম, ওর মা ওকে কি খাওয়ালো, এমন সব কথাও অকপটে আলোচনা করতে বাঁধতো না ওদের সাথে। আর ওরাও কেন জানি না ফিহাকে অদ্ভুত সখ্যতায় বেঁধে ফেলেছিলো। এই ছুটির সময় ওদের সাথে সেল ফোনে কথা বলে আর এসএমএস করেই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাতো ও। পারতপ েবাইরে বের হতো না। হয়তো সন্ধ্যের দিকে বলতো, আব্বু আমি একটু নীচে থেকে আসি। তখনই বুঝতাম নিশ্চয়ই নিচে শাহজাদা এসেছ্‌ে ওর সাথে গল্প করবে।

ফিহা বন্ধুদের কখনোই ওর বাসায় আসতে বলতো না। ওরা এলে নাস-া বানাতে, আপ্যায়ন করতে মায়ের কষ্ট হবে শুধু এই জন্য। ডেলটা হাসপাতালে যখন ফিহার বেশ খারাপ অবস’া, তখন ফিহার সেই পনেরো জন অসাধারণ বন্ধুরা সবাই ফিহার পাশে এসে ভিড় করলো। তখন ওদের সাথে আমাদের দুজনের প্রথম পরিচয় হলো। সে সময়েও ফিহা ওদেরকে ওর কাছে আসতে নিষেধ করতো। ফিহা চলে যাওয়ার পরে যখন ওর বন্ধুদের সাথে আমাদের পরিচয় আরও ঘনিষ্ট হলো। তখন দেখলাম ওর বন্ধুরা কি অসাধারণ ভালবাসতো ফিহাকে, আর ওদের জীবনে ফিহা যে কতো গভীর প্রভার বিস-ার করে রেখেছিলো। কেবল ওদের ওপরই নয়। ওর স্মরণে মনস-ত্ব বিভাগে যে স্মরণ সভা হয়েছিলো, সেখানে গিয়ে দেখেছি ওর শিক্ষকরা, ওর ক্লাসের বন্ধুরা, এমন কি নীচের ক্লাসের ছেলেমেয়েরাও ওর জন্য আকুল হয়ে কাঁদছে।

আমি তখন অবসর জীবন কাটাচ্ছি। ঘুম থেকে ওঠা আর ঘুমাতে যাবার সময় পর্যন- প্রায় সারাটা সময় কম্পিউটারের বোতাম টেপাটেপি করি, লেখালেখি করি, মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সভাসমিতিতে যাই। তা-ও নেহায়েত কম। কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের অনুবাদ আর সম্পাদনার কাজও করি। আমার অবসর জীবনটা আমি বেশ নির্লিপ্তভাবে আর আনন্দচিত্তেই যাপন করছিলাম।

পপি সে তুলনায় বেশ একটু বেশীই ব্যস-। সকালে নামাজ-কালাম শেষ করে ঘর-সংসার গুছানো, সারা দিনের রান্না করা আর অফিসে যাওয়ার প্রস-তির সাথে সাথে তার ‘ব্যর্থ জীবনের কড়চা’ আপন মনে বকে যায়- যার অধিকাংশ ‘অকর্মন্য’ নির্লিপ্ত আমি আর ‘অলস’ ফিহার উদ্দেশ্যে। তারপর পৌনে আটটা বাজার সাথে সাথে তৈরী হয়ে দুড়দাড় করে আমাদের এই চার তলার ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে প্রস’ান করে – ‘ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো”-

ফিহা তখনও বিছানার সাথে আঠা-লাগানো দেহটা তোলে না।

অত্যন- আনন্দ নিয়ে ও রংপুর, দিনাজপুর আর রাজশাহী ঘুরে এলো। প্রতি দিনই সন্ধ্যের দিকে ও আমাদের ফোন করতো। নিজের বেড়ানোর কথা বলার আগে আমাদের কথা জিজ্ঞেস করতো- আমরা কেমন আছি, কোন অসুবিধা হচ্ছে কি না- এই সব। তার পর ওর অভিজ্ঞতার কথা বলতো।

রংপুরে ওর সেজ খালা আর দুই মামা থাকে আর রাজশাহীতে ওর ছোট খাল। ওদের বাসায় দুই-চার দিন ছিলো। তাদের সাথে বেশ মজা করেছে। রাজশাহীর খালাতো বোনের একটা মেয়ে হয়েছিলো, যাকে ও আগে দেখেনি। রাজশাহী গিয়ে ওর খালার বাসায় উঠে ফোন করে জানতে চাইলো, ওর নতুন ভাগিনাকে ও কি দেবে। আমরা ওকে কিছু পরামর্শ দিলাম।

ঘুরে আসার পর ওর ভাইভা পরীক্ষা হলো। আর প্রায় এই সময়ই ও একটু অসুস’তা বোধ করলো। আমি প্রথমে খুব একটা খেয়াল করিনি। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের দিকে তো সব সময় তাকিয়ে থাকা যায় না। তার ওপর এমন একটা ছেলে, যে কোন দিন কোন অনিয়ম করেনি, বিশৃংখল হয়নি।

১৪

পপি একদিন আমাকে বললো, ফিহা ওর বাম কাঁধটা নাড়াতে অসুবিধা বোধ করছে।

প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম, হয়তো বেকায়দায় শুয়ে কিংবা ঠাণ্ডা লেগে কাঁধের জোড়াটায় অসুবিধা হয়েছে। অনেকেরই হয়, ডাক্তারী ভাষায় বলে ফ্রোজেন শোল্ডার।

এর মধ্যে একদিন রাতে খাওয়ার টেবিলে বাম হাত দিয়ে তরকারির বাটিটা ওর নিজের দিকে নেবার জন্য তুলতে গিয়ে ব্যাথাটা বাহু আর হাত জুড়ে এমন কষ্টকর লাগলো যে বাটিটা আর তুলতে পারলো না ও।

আমি এক মনে খাচ্ছিলাম- চোখ তুলে ওর দিকে তাকিয়ে বাটিটা ওর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হয়েছে হাতে?’

ও বললো, ‘কাঁধের কাছটায় কেমন জানি বেশ ব্যাথা।’

‘বাটিটা তুলতে পারলি না। এত বেশী ব্যাথা হয়েছে কবে থেকে?’

‘দুই-তিন দিন হলো।’

‘কাল সকালে তোর মা’র সাথে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বল, অবহেলা করছিস কেন?’ তারপর পপির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘কাল কাউকে দেখিয়ে দিও তো।’

পপি বললো, ‘দু’দিন প্যারাসেটামল খাক, সেরে যাবে। মোড় লেগেছে বোধহয়, যে খারাপভাবে উল্টো-পাল্টা হয়ে শুয়ে থাকে।’

আমি বললাম, ‘তবু যাক, দেখিয়ে দিও।’

পপি শিশু হাসপাতালের প্রশাসনে কাজ করে বিশ বছরের উপরে, তার চেয়ে আগে হাসপাতালে যোগ দেয়া অল্প কিছু বয়ষ্ক আর পুরানো ডাক্তার ছাড়া অধিকাংশ ডাক্তারের চাকরীই ওর হাতে। তাই সব ডাক্তারের সাথেই ওর খুব খাতির। এমন ডাক্তারও আছেন ফোন করলে ওর টেবিলের সামনে হাজির হতে পাঁচ মিনিটও সময় নেয় না। এদের মধ্যে আবার অনেকে বেশ বড় বড় ডিগ্রিধারীও।

পর দিন সকালে দেখি ওর ব্যাথাটা আরও বেড়েছে, হাতটা নাড়তেই অসুবিধা হচ্ছে।

পপি সকালের কাজকর্ম সারতে সারতে ফিহার ঘরের সামনে এসে আওয়াজ দিলো, ‘ফিহা, তৈরী হয়ে নাও।’

ও তৈরী হয়ে পপির সাথে নিচে নেমে দেখে পপির নির্ধারিত রিক্সাওয়ালাটা যথানিয়মে দাঁড়িয়ে। ওকে দেখে এক গাল হেসে বললো, ‘ভাইজানের শরীলটা বালা?’

ও ঘাড় নেড়ে রিক্সায় উঠে ওর মার পাশে বসতে পপি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘ব্যাথাটা কি খুব বেশী?’

ও শুধু মাথা নেড়ে বুঝিয়েছিলো বেশী।

হাসপাতালে নিজের সিটে বসেই পপি ফোন তুলে ডাক্তার আসলামের সাথে কথা বলতে দশ মিনিটের মধ্যেই ডাক্তার আসলাম এসে হাজির।

‘আপা, কি ব্যাপার? আরে ভাগিনা যে, রেজাল্টের খবর কি?’

ফিহাকে ওরা সবাই ভাল করেই চেনে। সে তুলনায় আমি ওদের কাছে বেশ অপিরচিত। ও হেসে উত্তর দিয়েছিলো, ‘দেরী হবে আরও।’

পপি ওকে বলেছিলো, ‘দেখেন তো আপনার ভাগিনা কি বাঁধালো? হাতে কিসের ব্যাথা বলছে।’

ফিহার দিকে তাকিয়ে ডাক্তার আসলাম বললেন, ‘দেখি ভাগিনা। কি হলো তোমার?’

ওর হাতটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে নিয়ে বললো, ‘অসুবিধা নেই। একটু ফিজিও দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। কাঁধের জোড়াটায় গরম পানির শেঁক দাও, এখন ফিজিওথেরাপী রুমে যাও, ওরা কিছু ফিজিও করে দেবে। রক্তের ক’টা পরীক্ষা করতে দিলাম। আর ওষুধ দিচ্ছি, এক সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে, চিন-ার কিছু নেই। সামনের সপ্তাহে রিপোর্ট নিয়ে দেখা করো।’

ফিজিওথেরাপি আর ওষুধ চললো এক সপ্তাহ। ব্যাথা কমলো না। রাতের ফিহার মার্কামারা ঘুমটা নিরুপদ্রব হলো না, অস্বসি-বোধ ক্রমে বাড়তে লাগলো। রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেল ও পরের সপ্তাহে। রিপোর্ট দেখে ব্যাথার কি অবস’া শুনে নিয়ে ডাক্তার বললেন, ‘তেমন কোন অসুবিধা তো দেখছি না। আরও ক’দিন ওষুধ খাও দেখি।’

আমি প্রতি দিনই জিজ্ঞেস করি কেমন আছে ব্যাথাটা। আমার প্রশ্নের উত্তর সব সময় দেয় না ও। চুপ করে বিছানায় শুয়ে থাকে অথবা সোফায় কাত হয়ে বসে টিভির দিকে থাকে। ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি ওর ব্যাথার কোনই উপসম হচ্ছে না। সব মানুষের মতো বাম ও ডান কাঁধ থেকে কণ্ঠার হাড় পর্যন- বুকের উপরের দিকে বড় আড়াআড়ি যে দুটো হাড় থাকে, এ দুটোকে অনেকে বলে কলার বোন, ডাক্তারের কাছে শুনলাম ও দুটোর নাম নাকি ক্ল্যাভিক্যাল। এর মধ্যে ধীরে ধীরে দেখি বাম দিকের ঐ হাড়ের উপর একটু ফুলে উঠেছে, আর বেশ ব্যাথাও।

আবার ও ওর মা-র সাথে হাসপাতালে গেল। এবার পপি ডাকলো অন্য আর এক ডাক্তারকে। ও এসে দেখে শুনে বললো, ‘সম্ভবত ফোঁড়ামতো কিছু হয়েছে, ওখানটায় গরম পানির শেঁক দাও। এন্টিবায়োটিক দিচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে ওটা বসে যেতে পারে, না হয় ভিতরের পূঁজ বের হয়েও যেতে পারে।’

এ ওষুধও চললো আরও এক সপ্তাহ। ব্যাথার পাশাপাশি স্ফীতিটা কমলো না, বরং একটু যেন বেড়ে গিয়ে ছড়িয়ে যেতে থাকলো। ফিহা খুব একটা আয়নার সামনে দাঁড়ায় না। তবু গোছলের পর চুল আঁচড়াতে গিয়ে এর মধ্যে একদিন খেয়াল করে দেখে স্ফীতিটা বেশ একটু ছড়িয়েছে। জায়গাটাও একটু বেশী গরম। একদিন আমিও কাছ থেকে ওর ঐ ফোলাটা ভাল করে দেখলাম। আমার কাছেও বেশ দুশ্চিন-ার মতো মনে হলো।

ব্যাথার দাপটে ফিহার রাতের ঘুমের ঘাটতি দেখা দিতে থাকলো। ব্যাথা সারাটা দিন থাকলেও সন্ধ্যার দিক থেকে ওটার তীব্রতা বাড়ে। রাতের দীর্ঘ সময় ব্যাথায় ছটফট করে হয়তো মাঝ রাতের দিয়ে ক্লান- হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ও। ভোঁতা ব্যাথাটা নিয়েই সকালে ঘুম ভাঙে ওর। আচ্ছন্নের মতো পড়ে থাকে। উঠতে বেশ বেলা হয়ে যায়।

ধীরে ধীরে ব্যাথাটা ঘাড় থেকে মাথার পিছন দিকটা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো, একটু আতঙ্ককর অবস’া। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই অত্যন- কাহিল হয়ে পড়লো ও। রাতে দীর্ঘ সময় ঘুম আসে না। রাতে দুই একবার ঘুম ভেঙে যায় ওর ব্যাথার চোটে।

পপি রাতে ওর ঘরের মেঝেতে শোয়, অনেক রাত পর্যন- ঘাড়ে হালকা ম্যাসাজ করে দেয়, যদি আরাম পায় ও। রাতেও দুই একবার গিয়ে দেখি ও অবসন্নভাবে পড়ে আছে। মনে হয় ঘুমে, কিন’ ঘুমায়নি। দিনের বেলায় আমি কখনও কখনও কাছে এসে ঘাড়ে ম্যাসাজ করে দেই। এটুকু পরিচর্যাও সে নিতে চায় না। বলে, ‘যাও তো, লাগবে না।’

আমি দেখেশুনে পপিকে বললাম, ‘এক কাজ করো, কাল শুক্রবার, তরিক রাজশাহী থেকে আসবে। বিকালে গিয়ে ওর সাথে দেখা করো।’

পপি বললো, ‘এত ব্যস- মানুষ ও, এত টাইট প্রোগ্রাম নিয়ে আসে, এর মধ্যে এ সব নিয়ে ওকে বিরক্ত করতে মনে সায় দেয় না।’

আমি বললাম, ‘তা’ হলেও এবার ওর মতামত না নিলে চলছে না। তোমার ডাক্তারদের ওষুধে তো কোন কাজ করলো না।’

সোনালীর স্বামী তরিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজের এসোসিয়েট প্রফেসর, ফিহা অবশ্য ওকে সোনাদি বলে ডাকে। তরিক রাজশাহীতে থাকলেও সোনালী ঢাকায় ওদের মেডিকেলে পড়া ছেলে আশিক আর ইন্টামেডিয়েটে মেয়ে চাঁদনীকে নিয়ে গ্রীন রোডে বিশাল ফ্যাটে থাকে, পাশের আর একটা ফ্ল্যাটে থাকেন সোনালীর মা, আমার আপা। আপা বর্তমানে আমাদের বংশের সবচেয়ে বড় সদস্য। কেবল আমাদের বংশেই না, আমার মা, খালা আর মামার পরিবারের সকল সন-ানদের মধ্যে সবার বড় এই আপা। আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এখন অবসর নিয়ে মেয়ের কাছে আলাদা ফ্যাটে থাকেন। ফ্ল্যাট আলাদা হলেও খাওয়া-দাওয়া, হৈ-হট্টোগোল, সব কিছুই এই দুই ফ্ল্যাট জুড়েই চলে।

অবশেষে ফিহা ওর দুলাভাইয়ের কাছে গেলো, শুক্রবার সন্ধ্যায়। নানা রকম কথাবার্তা চলতে থাকলো। গিয়েই তো খপ্‌করে বলা যায় না, আমার এই হয়েছে, দেখে দেন।

অবশেষে সুযোগ বুঝে তাকে বললো ও। তরিক দেখলো ভাল করে। একটা নতুন ওষুধ খেতে দিলো, সেই সাথে দুটো আলাদা পরীক্ষা করতে দিয়ে বললো, ‘আগামী সপ্তাহে রিপোর্টসহ আমার সাথে দেখা করবা।’

Leave a Reply